সিরিয়া যুদ্ধের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত (চতুর্থ পর্ব)

সিরিয়া যুদ্ধের বর্তমান পরিস্থিতি হাদীসের আলোকে যেভাবে ধীরে ধীরে ইমাম মাহদী (আঃ) এর আগমনের  দিকে মোড় নিবে সেটাই এই পর্বে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা হবে। বর্তমান সিরিয়ার যুদ্ধটি ইরাক ও মিশরকে গ্রাস করে থেমে থাকবে না বরং পুরো মধ্য প্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা, মধ্য এশিয়াকে একটি ভয়ংকর অসমাপ্ত যুদ্ধের দিকেই ঠেলে দিবে। সমগ্র মুসলিম বিশ্বে ভবিষ্যতে যে ঘটনাগুলো ঘটবে সেগুলো সময়ের সাথে মিল রেখে উল্লেখ করা হবে। ( ইনশাল্লাহ)


১, ২০১১ সালে আরব বসন্ত সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধে মোড় নেয়া।

২, ২০১২ সালে সিরিয়া যুদ্ধে ইরাকের জিহাদী গোষ্ঠী ইসলামিক ইস্টেট  (Islamic state of Iraq) প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ ।

৩, ২০১২ সালে ইরানের IRGC, লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইরাকের শিয়া মিলিশিয়া ও আফগানিস্তানের শিয়া মিলিশিয়াদের প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পক্ষে যুদ্ধে যোগ দেয়া।

৪, ২০১৪ জাবাহাত আল নুসরা (বর্তমান HTS) এর সাথে বিরোধের জেরে ইসলামিক ইস্টেট (Islamic state of Iraq and syria - ISIS) খিলাফত ঘোষণা।

৫, ২০১৪ সিরিয়া ও ইরাকে ইসলামিক ইস্টেট কে নির্মূল করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের বিমান হামলা শুরু।

৬,২০১৫ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ব্লাদিমির পুতিনের প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পক্ষে যুদ্ধে যোগ দেয়া।

৭, ২০১৬ সালে সিরিয়া যুদ্ধে ইসলামিক ইস্টেট ও কুর্দি বাহিনীর বিরুদ্ধে তুরস্কের অংশগ্রহণ।

৮, ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের জয় জয়কার অবস্থা।

৯, ২০১৭ সালে ইরাকের স্থায়ত্বশাষিত কুর্দিস্থান সরকারের সাথে ইরাকের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধের শুরু।

১০,সিরিয়াতে স্থিতিশীলতা ফিরে আসা এবং প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের মৃত্যুর পর  শিয়া নুসাইরি লোকজন ব্যাপকভাবে হত্যার সম্মুখীন হওয়া।

“ততক্ষণ পর্যন্ত কেয়ামত হবে না, যতক্ষণ না পর্যন্ত ইরাক আক্রান্ত হবে এবং নিরপরাধ ইরাকবাসী সিরিয়াতে আশ্রয় নিবে। সিরিয়া পুনঃনির্মিত হবে এবং ইরাক পুনঃনির্মিত হবে”। (মুন্তাখাব কানাজুল উম্মাল, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ২৫৪)

**হযরত কা’ব (রহঃ) থেকে বর্নিত, তিনি এরশাদ করেন, বিশাল একটি জামাআতকে(দলকে) সুফিয়ানী (বাশার আল আসাদ) দুইবার পরাজিত করে তাদের উপর কর আরােপ করবে এবং তাদের জনগণকে বন্দি করবে। কুরাইশের জনৈকা নারীকে জবাই করার মাধ্যমে হত্যা করে, তার পেটচিড়ে বাচ্চা বেরকরে আনবে। এরপর সুফিয়ানী মারা গেলে তার পরিবারের সদস্যদের থেকে কতিপয় লোক ব্যাপক ভাবে হামলার মুখে পড়বে । কয়েক বৎসর পর  নিষ্ঠুরতম এক লোক(প্রথম সুফিয়ানী যে মুসলিম বিশ্বের খলিফা দাবি করবে) , অভিশপ্ত জাতির অন্তর্ভুক্ত লোকজনকে (অর্থাৎ বনিকাল্ব গোত্রের শিয়া নুসাইরি ও তাদের সহযোগী দের) তার প্রতি আহবান জানাবে। তার নাম হবে আবদুল্লাহ। সে নিজে যেমন অভিশপ্ত হবে , তার অনুসারীরাও অভিশপ্ত হবে । তাদের প্রতি আসমান ও জামিনের সবাই অভিশাপ দিবে। সে হিমস নগরীতে এসে পৌঁছবে এবং দামেস্ক নগরীতে আগুন জালিয়ে দিবে। সে বনি আব্বাসের দুই ব্যক্তিকে (অর্থাৎ আসহাব জাতি ও আবকা জাতিকে) পরাজিত করে দিবে।

(নুয়াইম বিন হাম্মাদের আল ফিতানঃ হাদীস নং - ৮৬৬)


১১, আসহাব জাতি অর্থাৎ ইসলামিক ইস্টেট Islamic state of Iraq and syria পরবর্তী প্রজন্ম ) পুনরায় সংগঠিত হবে এবং সিরিয়ার যুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী গ্রুপ হয়ে আত্মপ্রকাশ ।

১২, কালো পতাকাবাহী আসহাব জাতির (অর্থাৎ ইসলামিক ইস্টেট এর পরবর্তী প্রজন্ম) দ্বন্দ্বে নিজেদের মধ্যে দুই ভাগ হয়ে যাওয়া এবং হিমস (Homs) শহরে  ভয়ংকর যুদ্ধ হবে।

১৩, নীল নদের উপর ইথিওপিয়া সরকারের (Grand Regiment Dam) এবং আল নাহদা বাধ (Al nahda  dam)  এর কারনে মিশরের নীল নদ শুকিয়ে গিয়ে মিশরের অর্থনীতি ভেঙ্গে যাওয়া এবং দুর্ভিক্ষ শুরু হওয়া।

মিশরের নীল নদের পানি আসে আফ্রিকার রুয়ান্ডা নদী থেকে ইথিওপিয়া ও সুদানের উপর দিয়ে। বর্তমানে নীল নদের পানি উল্লেখ যোগ্য হারে কমে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে Al Nahda Dam এর কারণে নীল নদের কমে যাওয়ায় মিশর, ইথিওপিয়া, সুদান সরকার সবাই যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি সরবরাহ পায় এজন্য একটি চুক্তি করে। আর ইথিওপিয়া সরকার Grand regiment dam নামে ৪.৮ বিলিয়ন ডলার ব্যায়ে  পৃথিবীর সপ্তম বৃহত্তম বাধ নির্মাণ করছে, এর কাজ এখন ৭০% শেষ হয়েছে, ধারণা করা হচ্ছে, এই বাধটি নির্মাণ শেষ হলে মিশর শুকিয়ে মরুভূমি হবে।
লিংকঃhttps://twitter.com/thenewkhaleej/status/920334871402250240


১৪, মাগরিব অঞ্চল (মরোক্কো, আলজেরিয়া, তিউনেসিয়া, আলজেরিয়া, লিবিয়া, মিশর)থেকে সাময়িক সময়ের জন্য কালো পতাকাবাহী দলের (Islamic state) এর উত্থান।

১৫, মাগরিব অঞ্চলে কালো পতাকাবাহী দলকে দমনের জন্য হলুদ পতাকাবাহী আবকা জাতি (Tuareg) দলের আবির্ভাব এবং সিরিয়ায় এসে কালো পতাকাবাহী দল থেকে হিমস (Homs) শহর দখল নিবে।

১৬, সিরিয়াতে আসহাব জাতি (অর্থাৎ Islamic state) ও মিশর থেকে  হলুদ পতাকাবাহী আবকা জাতি (অর্থাৎ Tuareg) দলের দ্বন্দ্বের কারণে সমগ্র সিরিয়ার মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত হবে।

১৭,ভূমিধ্বসের কারনে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক (Damascus)  এর আরম নামক জনপদ ও বনি উমাইয়া মসজিদের পশ্চিম দেয়াল (যে মসজিদে হযরত ঈসা আঃ আকাশ থেকে নামবেন) ধ্বসে পরবে।

১৮,ওয়াদিউল ইয়াবেস (অর্থাৎ সিরিয়ার দারা (Daraa) শহর) থেকে বানু কাল্ব গোত্রের প্রথম সুফিয়ানী আত্মপ্রকাশ করে, নিজেকে মুসলিম বিশ্বের খলিফা দাবি করবে এবং আসহাব জাতি (Islamic state) ও আবকা জাতির (Tuareg) দের উপর বিজয়ী হবে।

১৯,ফোরাত নদীর তীরে সিরিয়ার দেইর আল জুর (Deir-ez-zur) এর নিকটবর্তী কিরকিসিয়া নামক স্থানে স্বর্নের পাহাড় ভেসে উঠবে এবং এটি দখলকে কেন্দ্র করে তুরস্ক ও আমেরিকানদের বিরুদ্ধে প্রথম সুফিয়ানীর ভয়াবহ যুদ্ধ হবে এবং ১ লক্ষ লোক নিহত হবে ।

২০, হলুদ পতাকাবাহী আবকা জাতিকে (Tuareg) দেরকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার জন্য দ্বিতীয় সুফিয়ানী মিশর আক্রমণ করবে এবং পুরো মিশরকে ধ্বংস করে দিবে।

২১, কালো পতাকাবাহী আসহাব জাতিকে(Islamic state) সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস করার জন্য প্রথম সুফিয়ানী ইরাকের কুফা(মসূল)  নগরীতে সৈন্য পাঠাবে এবং পথিমধ্যে সে মারা যাবে।

২২, প্রথম সুফিয়ানীর মৃত্যুর পর পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি আসল সুফিয়ানী ক্ষমতা গ্রহণ করবে এবং ইরাকের কুফা নগরীতে কালো পতাকাবাহী আসহাব জাতির (Islamic state) এর ৭০ হাজার বা, ১ লক্ষ লোক হত্যা করবে পরবর্তীতে পুরো ইরাকে হামলা করবে ।

**হযরত আরতাত (রহঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন,দ্বিতীয় সুফিয়ানীর যুগে নিকৃষ্ট চরিত্রের কিছু
লোকের আবির্ভাব ঘটবে এবং শামের দিকে বিভিন্ন ধরনের ফেৎনা প্রকাশ পাবে। একপর্যায়ে প্রত্যেক জাতী মনে করবে, যে তার পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজন থেকে বেশি খারাপ অবস্থায় রয়েছে ।

(নুয়াইম বিন হাম্মাদের আল ফিতানঃ হাদীস নং - ৬৪৮)


প্রথম ২২টি বিষয়ে আগের পর্ব গুলোতে আলোচনা করা হয়েছে তাই এই পর্বে আর উল্লেখ করছি না। যারা আগের পর্ব গুলো পড়েননি তারা সিরিয়া যুদ্ধের বর্তমান ও ভবিষ্যৎঃ এর তিনটি পর্ব দয়া করে পড়ে নিবেন।


২৩, খোরাসান (আফগানিস্তান ও তার পার্শ্ববর্তী দেশ) থেকে হারস হাররাস নামক যুবকের নেতৃত্বে ও তার সহযোদ্ধা প্রবিন শুয়াইব বিন সালেহ সাহায্যে কালো পতাকাবাহী দল বের হবে এবং তারা ইরাকের কুফা নগরীতে ভয়ংকর যুদ্ধে আসল সুফিয়ানীকে পরাজিত করে ইরাক, সিরিয়াতে কর্তৃত্ব পাবে।


** হযরত ইবনুল হানাফিয়াহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খোরাসান(আফগানিস্তান) থেকে কালাে ঝান্ডাবাহী দল এবং শুয়াইব ইবনে সালেহ ও মাহদী (আঃ) এর আত্মপ্রকাশ আর মাহদী (আঃ) এর হাতে ক্ষমতা  আসা বাহাত্তর মাসের (অর্থাৎ ৬বছর) মধ্যেই সংঘাত হবে ।

(নুয়াইম বিন হাম্মাদের আল ফিতানঃ হাদীস নং - ৮০৪)


ইরাকের কুফা নগরীতে কালো পতাকাবাহী আসহাব জাতি (অর্থাৎ ইসলামিক ইস্টেট) এর হত্যাকাণ্ডের পর পরই খোরাসান(আফগানিস্তান) থেকে আরেকটি কালো পতাকাবাহী দল এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য মাত্র ৪ হাজার সৈন্য নিয়ে সিরিয়ার বাদশা সুফিয়ানীর উপর হামলা করবে। আর এই আফগানিস্তান থেকে কালো পতাকাবাহী দলটি নেতৃত্ব দিবেন হারস হাররাস নামের এক যুবক, যিনি আসবেন মধ্য এশিয়া(উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান, কাজাকিস্তান ও চীনের জিংজিয়াং) একটি দেশ থেকে। তাকে চিনার উপায় হচ্ছে তার বাম হাতে অথবা, বাম কাধে বড় একটি তিল থাকবে। আর তার সহযোগী যোদ্ধা হিসেবে বয়সে প্রবিন শুয়াইব বিন সালেহ নামে আরেক জন ব্যক্তি থাকবেন। আর এই বাহিনীতেই ইমাম মাহদী (আঃ) এবং মনসুর সাধারণ যোদ্ধা হিসেবে থাকবেন কিন্তু তখন তাদেরকে কে চিনবে না।


**হযরত আরতাত (রাঃ) বলেন,
“সুফিয়ানি কুফায় প্রবেশ করবে। তিনদিন পর্যন্ত সে দুশমনদের বন্দীদেরকে সেখানে আটকে রাখবে এবং সত্তর হাজার কুফাবাসীকে হত্যা করে ফেলবে। তারপর সে আঠার দিন পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে তাদের (কুফাবাসীদের) সম্পদগুলো বণ্টন করবে। সুফিয়ানির কুফায় প্রবেশ করার ঘটনাটি তুরস্ক ও পশ্চিমাদের সাথে ‘কিরকিসিয়্যা’ এর ময়দানে যুদ্ধের পর ঘটবে। তাদের মধ্যে একদল খোরাসানে ফেরত যাবে। সুফিয়ানির সৈন্যবাহিনী আসবে এবং কুফার বিল্ডিংগুলো ধ্বংস করে সে খোরাসানবাসীদেরকে তালাশ করবে। খোরাসানের একটি দলের আবির্ভাব ঘটবে, যারা ইমাম মাহদির দিকে আহ্বান করবে। এরপর সুফিয়ানি মদিনার দিকে সৈন্য পাঠিয়ে রাসুলের বংশীয় লোকদেরকে বন্দী করবে। বন্দীদের কুফায় নিয়ে যাওয়া হবে। অতঃপর মাহদি ও মানসুর (একজন সেনাপতি) উভয়ে উভয়ে কুফা থেকে পলায়ন করবে। সুফিয়ানি উভয়ের তালাশে সৈন্য প্রেরণ করবে। অতঃপর যখন মাহদি ও মানসুর মক্কায় পৌঁছে যাবে, তখন সুফিয়ানির বাহিনীকে ‘বায়দা’ নামক স্থানে মাটির নিচে ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে। এরপর মাহদি মক্কা থেকে বের হয়ে মদিনায় যাবেন এবং ওখানে বনু হাশেমকে মুক্ত করবেন। এমন সময় কালো পতাকাবাহী লোকেরা এসে পানির উপর অবস্থান করবে। কুফায় অবস্থিত সুফিয়ানির লোকেরা কালো পতাকাবাহী দলের আগমনের কথা শুনে পলায়ন করবে। কুফার সম্মানিত লোকেরা বের হবে যাদেরকে ‘আসহাব’ বলা হয়ে থাকে, তাদের কাছে কিছু অস্ত্র শস্ত্রও থাকবে এবং তাদের মধ্যে বসরা’বাসীদের থেকে একজন লোক থাকবে। অতঃপর কুফাবাসী সুফিয়ানির লোকদেরকে ধরে ফেলবে এবং কুফার যে সব লোক তাদের হাতে থাকবে, তাদেরকে মুক্ত করবে। পরিশেষে কালো পতাকাবাহী দল এসে মাহদির হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবে”।
(আল ফিতানঃ ৮৫০, মুহাক্কিক আহমদ ইবনে সুয়াইব এই হাদিসটির সনদকে ‘লাবাসা বিহা’ বা ‘বর্ণনাটি গ্রহণ করা যেতে পারে’ বলেছেন)


**হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
“সুফিয়ানির ঘোড়াগুলো (সৈন্যবাহিনী) কুফায় প্রবেশ করবে। সে তার সৈন্যদেরকে খোরাসানবাসীদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করবে। খোরাসানবাসীরা লোকদেরকে ইমাম মাহদির দিকে আহ্বান করবে (ইমাম মাহদির আত্মপ্রকাশের পূর্বে)। তখন সে (সুফিয়ানি) কালো পতাকাবাহী একদল হাশেমীদের মুখোমুখি হবে যার স্মমুখভাগের নেতৃত্ব দিবে শুহাইব বিন সালেহ। সে সুফিয়ানির বাহিনীকে ‘ইস্তাখর এর ফটকে’ ব্যস্ত রাখবে। এই দুই বাহিনীর মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হবে এবং কালো পতাকাবাহী বাহিনী জয়লাভ করবে। কিন্তু সুফিয়ানির ঘোড়াগুলো (সৈন্যবাহিনী) পলায়ন করবে। এটাই হবে সেই সময় যখন লোকজন ইমাম মাহদির আত্মপ্রকাশের জন্য খুব আশা করতে থাকবে কারণ, তাঁকে (ইমাম মাহদিকে) তাদের প্রয়োজন”।

(নুয়া’ইম ইবনে হাম্মাদ, আল ফিতান)


‘ইস্তাখর’ বর্তমানে ইরানের সিস্তান প্রদেশের অন্তর্গত একটি পরিত্যাক্ত ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত  শহর। যা কিনা বৃহত্তর খোরাসানের অন্তর্গত।


২৪,সৌদি আরবে ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে তিনজন রাজপুত্রের মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হবে এবং এই যুদ্ধে বনি কায়েস গোত্রের (অর্থাৎ আফগানিস্তানের পশতুন বা, পাঠান জাতি) কালো পতাকাবাহী দল মারমুখী যুদ্ধ চালাবে ।

**হযরত ছওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“তোমাদের ধনভাণ্ডারের (রাজত্বের জন্য)  নিকট তিনজন বাদশাহ এর সন্তান যুদ্ধ করতে থাকবে। কিন্তু ধনভাণ্ডার (রাজত্ব) তাদের একজনেরও হস্তগত হবে না। তারপর পূর্ব দিক (খোরাসান) থেকে কতগুলো কালো পতাকাবাকী দল আত্মপ্রকাশ করবে। তারা তোমাদের সাথে এমন ঘোরতর লড়াই লড়বে, যেমনটি কোন সম্প্রদায় তাদের সঙ্গে লড়েনি”।
বর্ণনাকারী বলেন, তারপর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও একটি বিষয় উল্লেখ করে বললেন,
“তারপর আল্লাহর খলীফা মাহদির আবির্ভাব ঘটবে। তোমরা যখনই তাঁকে দেখবে, তাঁর হাতে বাইয়াত নেবে। যদি এজন্য তোমাদেরকে বরফের উপর দিয়ে হামাগুড়ি খেয়ে যেতে হয়, তবুও যাবে। সে হবে আল্লাহর খলীফা মাহদি”।

(সুনানে ইবনে মাজা; খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৩৬৭; মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫১০)


২৫,ইরাকের কুফা নগরীতে খোরাসান থেকে আগত কালো পতাকাবাহী দল পুনরায় সুফিয়ানীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে পরাজিত হবে।


২৬, নফসে জাকিয়া (পবিত্র আত্মা) কে হত্যা করা হবে। সম্ভবত খোরাসান (আফগানিস্তান)  থেকে আগত কালো পতাকাবাহী দলকে নেতৃত্ব প্রদানকারী হারস হাররাস কে বুঝানো হয়েছে।


২৭, সিরিয়ার বাদশা সুফিয়ানী সৌদি আরবে কালো পতাকাবাহী দলকে দমন করার জন্য আক্রমন করে ব্যপক হত্যাকাণ্ড ও লুটপাট চালাবে এবং সেখান থেকে ইমাম মাহদী (আঃ) ও মনসুর কে আটক করে ইরাকের কুফা নগরীতে নিয়ে যাবে ।


২৮, ইরাকের কুফা (মসূল)  নগরী থেকে ইমাম মাহদী (আঃ) ও মনসুর পালিয়ে যাবে।


২৯, পূর্ব আকাশে পূর্ণিমার চাঁদের মত উজ্জ্বল একটি তারকা ভেসে উঠবে, যা পৃথিবীর সকল প্রান্ত থেকে দেখা যাবে।

** হযরত কাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন বনি আব্বাসীয়দের ধ্বংসের পূর্বে মাঝ আকাশে একটি নক্ষত্র দেখা যাবে তারপর বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খলা ও গোলযোগ দেখা দিবে। এসব কিছু হবে মূলতঃ রমযান মাসে। লালিমা প্রকাশ পাবে রমাযান মাসের পাচ
তারিখ থেকে বিশ তারিখের মধ্যে। আর বিকট শব্দ প্রকাশ হবে রমাযানের পনের তারিখ থেকে বিশ
তারিখের মধ্যে, আর দূর্বল ও রুগ্নতার আবির্ভাব হবে বিশ রমাযান থেকে  চব্বিশ রমজানের মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে। অতঃপর এমন একটি তারকা উদিত হবে ,যার আলাে হবে চন্দ্রের আলোর ন্যায়। এরপর উক্ত তারকা সাপের ন্যায় কুন্ডুলী পাকাতে থাকবে ।যার কারনে তার উভয় মাথা একটা আরেকটার সাথে মিলিত হওয়ার উপক্রম হবে । অতপর বড় একটি রাতে দুইবার ভূমিকম্প হওয়া এবং আসমান থেকে জমিনের দিকে যে তারকাটি নিক্ষিপ্ত হবে ,তার সাথে থাকবে বিকট আওয়াজ। এক পর্যায়ে সেটা পূর্ববাকাশে (অর্থাৎ চীন, জাপান, কোরিয়া) গিয়ে পতিত হবে । যা দ্বারা মানুষ বিভিন্ন ধরনের বালা-মুসিবতের সম্মুখীন হবে ।

(নুয়াইম বিন হাম্মাদের আল ফিতানঃ হাদীস নং - ৬৪৩)


সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে গত ১৭ অক্টোবর ২০১৭ বিজ্ঞানীরা দেখেন যে, মহাকাশে দুটি উজ্জ্বল নক্ষত্র (Neotron star) কে সাপের কুণ্ডলীর মতো পরস্পরের দিকে ঘুরতে থাকে এবং বিস্ফোরণ সহকারে একত্রিত হতে দেখে বিস্মিত হন। এই দুটি নক্ষত্রের বিস্ফোরণে স্বর্ন ও  প্লাটিনাম মহাকাশে ছড়িয়ে পরতে দেখে আশ্চর্য হয়ে যান। দেখুন Al jazeera news নিউজ লিংকঃ
https://twitter.com/AJENews/status/920295907169636352


৩০, পবিত্র রমজান মাসে দুইবার সূর্য গ্রহণ হবে এবং ১৫ই রমজান শুক্রবার রাতে উক্ত উজ্জ্বল তারকাটি পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তে (জাপান, চীন, কোরিয়া) বিকট আওয়াজ সহকারে ধ্বসে পরবে।


**হযরত ফিরোজ দাইলামী (রাঃ) বর্ণিত, তিনি বলেন নবী করিম (সাঃ) থেকে ইরশাদ করেন যে, রমজান মাসে আকাশ থেকে একটি বিকট আওয়াজ আসবে। তখন সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন এটা কি রমজান মাসের শুরুতে হবে?  নাকি মধ্যভাগে? নাকি শেষে? উত্তরে তিনি বলেন, ১৫ই রমজান জুমার (শুক্রবার) রাতে হবে। যার কারণে ৭০ হাজার লোক জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে, ৭০ হাজার লোক বোবা হয়ে যাবে, ৭০ হাজার লোক অন্ধ হয়ে যাবে, ৭০ হাজার লোক বধির হয়ে যাবে। অতপর সাহাবীরা জানতে চাইলেন, হে আল্লাহর রাসূল, ঐদিন কারা এই আজাব থেকে মুক্তি পাবে? উত্তরে তিনি বলেন, যারা নিজের ঘরে অবস্থান করবে, উচ্চস্বরে আল্লাহু আকবর বলে তাকবির দিবে, এবং সেজদায় লুটিয়ে পরবে, তারাই মুক্তি পাবে।

(মুজমাউল কাবিরঃ অধ্যায় ১৮,পৃষ্ঠা - ৩৩২)


৩১,  পুরো আরব উপদ্বীপে (সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন, ওমান) এলাকায় যুদ্ধ ছড়িয়ে পরবে। এবং হজ্জ্বের সময় সৌদি আরবের মিনায় হাজীদেরকে ব্যপক হারে হত্যা করা হবে।


**হযরত ফিরোজ দাইলামী (রাঃ) বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, ঘটনা পরিক্রমায় এরকম হবে যে, বিকট আওয়াজ আসবে রমজান মাসে, ঘোরতর যুদ্ধ হবে শাওয়াল মাসে, আরবের বিভিন্ন গোত্রের মাঝে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা হবে জিলকাদ মাসে, হাজীদের লুণ্ঠন করা হবে জিলহাজ্জ মাসে। মুহাররমের শুরুটা আমার উম্মতের জন্য বিপদ আর শেষে রয়েছে মুক্তি।

(মুজমাউল কাবিরঃ অধ্যায় ১৮, পৃষ্ঠা - ৩৩২)


৩২,সাধারণ মানুষ পবিত্র কাবাঘরে ইমাম মাহদী আঃ কে চিনতে পারবে এবং তার অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে মুসলিম বিশ্বের খলিফা নির্বাচিত করা হবে।


** হাফসা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেনঃ “অচিরেই এই ঘরের অর্থাৎ কা’বা ঘরের পাশে একদল লোক আশ্রয় গ্রহণ করবে। শত্রুর সাথে মোকাবেলা করার মত তাদের কোন উল্লেখযোগ্য সৈনিক কিংবা অস্ত্র-শস্ত্র বা প্রস্তুতি থাকবেনা। তাদেরকে হত্যা করার জন্য একদল সৈনিক প্রেরণ করা হবে। সৈন্যরা যখন ‘বায়দা’ নামক স্থানে পৌঁছবে তখন যমিন তাদেরকে গ্রাস করে ফেলবে।

কেবল মাত্র ৩১৩ জন মানুষ ইমাম মাহদী আঃ এর হাতে বাইয়াত করার সৌভাগ্য লাভ করবেন, বলতে গেলে প্রথম অবস্থায় পুরো পৃথিবীর সবাই ইমাম মাহদী (আঃ) কে জঙ্গী, সন্ত্রাসী বলেই গালি দিবে । পরবর্তীতে  আল্লাহর সাহায্যে ১ রাতের মধ্যেই তিনি পরিপূর্ণ মাহদী আঃ পরিনত হবেন।

(চলবে.....)

Popular posts from this blog

ইমাম মাহদী কোথায় জন্মগ্রহণ করবেন? আমরা তাকে কোন দলে খুঁজে বের করব?

ইমাম মাহদীর আবির্ভাব হবে ২০২৮ সালে (ইনশাল্লাহ)

ফোরাত নদীর তীরে সোনার পাহাড় কোথায় এবং কবে ভেসে উঠবে? (২০২৩ সালে ইনশাল্লাহ)