সিরিয়া যুদ্ধের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত (দ্বিতীয় পর্ব)

সিরিয়া যুদ্ধের প্রথম দিকে আমরা দেখেছিলাম ইরাকের ইসলামিক ইস্টেট(Islamic State of Iraq and Syria-ISIS) ও সিরিয়ার জাবাহাত আল নুসরা(বর্তমান হায়াতা তাহরির আল শাম-HTS) সবাই কে অবাক করার মত সাফল্য পেয়েছিল।একে একে তারা দখল করে নিয়েছিল আলেপ্পো, রাক্কা, ইদলিব, দেইর আল জুর (Deir-ez-zur), দ্বারা (Daraa),পালমিরা, হোমস প্রদেশের এর কিছু অংশ এবং হামা এর কিছু অংশ দখল করে নিয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রিত এলাকা গুলো ধরে রাখতে পারছে না। বরং ২০১৫ সালে সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পো (Aleppo) থেকে ইসলামপন্থী দের পতন এবং পরবর্তীতে ধারাবাহিক ভাবে দ্বারা (Daraa),এবং উত্তর আলেপ্পো, রাক্কা, হোমস, পালমিরা, দেইর আল জুর পতন হয়। যার কারণে অনেক মানুষ যারা পূর্ণাঙ্গ ইসলামী শাসনের স্বপ্ন দেখতে ছিল তারা মারাত্মক ভাবে ব্যথিত হয়। আসুন এখন আমরা বর্তমান সময়ের সাথে সামঞ্জস্য পূর্ণ কয়েকটি হাদিসের বর্ননা দেখে নেই।

**হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, ‘হে আল্লাহ! আমাদের শামে (সিরিয়া) ও ইয়ামেনে অপনি বরকত দান করুন। লোকেরা বলল, আমাদের নজদেও। তিনি পুনরায় বললেন, হে আল্লাহ! আমাদের শাম (সিরিয়া) দেশে ও ইয়ামেনে বরকত দান করুন। লোকেরা আবারও বলল, আমাদের নজদেও। তখন তিনি বললেন, সেখানে তো রয়েছে ভূমিকম্প ও ফেতনা-ফ্যাসাদ; আর শয়তানের শিং সেখান থেকেই বের হবে (তার উত্থান ঘটবে)।

(বোখারি : ১০৩৭)


* হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, শাম (সিরিয়া) দেশের ফিতনা এত মারাত্মক আকার ধারণ করবে যে, যার কারণে সমাজের সম্মানিত লোকজন প্রথমে বিজয়ী হবে। অবশ্যই সেটা খুব অল্প সময়ের জন্য। পরবর্তীতে তাদের উপর নিন্ম শ্রেণীর লোকজন বিজয়ী হবে, যাদের জ্ঞান বুদ্ধি খুবই কম। যাতে করে তোমাদেরকে কৃতদাস বানিয়ে রাখতে পারে, যেরকম পূর্বযুগে রাখা হত।

(নুয়াইম বিন হাম্মাদের আল ফিতানঃ হাদীস নং ৬৭৯)


এই হাদীসের সাথে বর্তমান সিরিয়ার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভাবে মিলে যাচ্ছে। IRGC, হিজবুল্লাহ, কুর্দি বাহিনী, SDF শিয়া মিলিশিয়ারা বিজয়ী এলাকা গুলোতে সাধারণ সুন্নি মুসলিমদের উপর বর্তমানে কৃতদাসের মতই আচরণ করছে।
বর্তমানে সিরিয়াতে ইসলামিক ইস্টেট খুব নাজুক অবস্থায় আছে, উত্তর আলেপ্পো, পালমিরা, হোমস, দারা, রাক্কা, দেইর আল জুর থেকে প্রতিনিয়ত বিতারিত হচ্ছে। অপর জাবাহাত আল নুসরা আরো কয়েকটি ছোট ছোট ইসলামিক দল নিয়ে HTS (হায়াতা তাহরির আল শাম) নামে একটি জোট করেছে। যারা ইদলিব, দারা, আলেপ্পোর কিছু অংশ, হোমস এর কিছু অংশ  নিয়ন্ত্রণ করছে। সিরিয়াতে বর্তমানে যাদেরকে সবচেয়ে শক্তিশালী বিদ্রোহী জোট হিসাবে গণ্য করা হয়। ধারণা করা হয় এই  জোটের সৈন্য সংখ্যা ৩১ হাজারেরও বেশি।

গত 20 September 2017 কাজাকিস্তানের রাজধানী আস্তানায় ইরান, রাশিয়া, ও তুরস্কের মধ্যে ইদলিব প্রদেশ থেকে HTS (তাহরির আল শাম ) ও আফরিন শহর থেকে কুর্দি বাহিনীকে বিতাড়িত করার জন্য একটি চুক্তি হয়। এই তিনটি দেশ ইদলিব থেকে HTS কে বিতাড়িত করে সেখানে স্থায়ী ভাবে সৈন্য মোতায়েন করবে।  ছবিতে দেখুন।


** হযরত ওয়ালিদ ইবনে ইয়াজিদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কালো পতাকাবাহী হয়ে তুর্কি সম্প্রদায় বেড়িয়ে আসবে। তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক, তাদের ঘোড়ার নিশ্বাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত। যতক্ষণ না পশ্চিমারা বের হয়ে আসবে।

(আল ফিতানঃ হাদীস নং - ৭৪৭)


হাদিসটিতে এরকম বুঝানো হয়েছে যে, যখন তুর্কিরা (তুরস্ক) তোমাদের সাথে যুদ্ধ করতে আসবে, তাদের যুদ্ধের সরঞ্জাম শেষ না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ করতে থাক। যতক্ষণ পর্যন্ত পশ্চিমারা (মাগরিব অঞ্চল অর্থাৎ মরোক্কো, তিউনেসিয়া, আলজেরিয়া, লিবিয়া থেকে বর্বর বাহিনী অর্থাৎ আবকা জাতি বের হয়ে না আসবে।
সাম্প্রতিক সময়ে ইরাক ও সিরিয়ায় চাপের মুখে থাকা ইসলামিক ইস্টেট শুধু লিবিয়াতে ১২হাজার সৈন্য জড়ো করে জড়ো হতে শুরু করেছে এবং  নতুন অনুসারীদেরকে লিবিয়াতে হিজরত করার জন্য নির্দেশ দিচ্ছে। তাই পরবর্তীতে যেকোন সময় তারা ইরাক ও সিরিয়ার মত বড় অভিযান শুরু করতে পারে। এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে উত্তর আফ্রিকায় আল কায়দার  মাগরিব অঞ্চলের চারটি জোট একত্রিত হয়ে (Jamat Nusrat Al Islam wal Muslimin-JNIM) নামে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। মালি, আলজেরিয়া, লিবিয়া ও মিশরে তাদের তৎপরতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর আমরা সবাই জানি ইসলামিক ইস্টেট ও আল কায়দার অনুসারীরা কালো পতাকা ব্যবহার করে।


* হযরত আবু কাবীল (রহঃ) বলেন, নিঃসন্দেহে পশ্চিমারা এবং ফুজাআ ও মারওয়ানের সন্তানগণ শাম দেশের মূল ভূখণ্ডে কালােপতাকার নিচে সমবেত হবে । বিশিষ্ট সাহাবী হযরত হোজাইফা ইবনুল ইয়ামান রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি একদা মিসর বাসীকে সম্মোধন করে বলেন, হে মিশরীগণ! যখন পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে তোমাদের দিকে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুর রহমান আসবে এবং তারা পুলের (অর্থাৎ ব্রিজের) উপর থাকা অবস্থায় তোমাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে ।তোমাদের এবং তাদের মিলিয়ে প্রায় সত্তোর হাজার যোদ্ধা হবে ।সে তোমাদেরকে মিশর এবং শামদেশ থেকে লাঞ্ছিত অবস্থায় কাফের আখ্যায়িত করে বের করে দিবে । ঐ পরিস্থিতিতে  জনৈকা আরবী মহিলা পচিশ দেরহাম নিয়ে দামেস্কের গেইটে অবস্থান করবে । অতঃপর পশ্চিমারা (অর্থাৎ মাগরিব অঞ্চল থেকে আগত হলুদ পতাকাবাহী দল) হিমস নগরীতে দীর্ঘ আঠার মাস পর্যন্ত অবস্থান করবে । এদিন গুলােতে তারা যাবতীয় সম্পদ বিলি করবে এবং নারী-পুরুষদের সবাইকে নির্বিচারে হত্যা করবে । কিছুদিন পর আসমানের নিচে অবস্থনরত সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোকদের অন্যতম একজন তাদের প্রতি ধেয়ে আসবে এবং তাদের সাথে যুদ্ধ করে তাদেরকে পরাজিত করবে । এক পর্যায়ে  তারা হিমস নগরী ছেড়ে দিয়ে মিশরের ভূখণ্ডে প্রবেশ  করবে।

(আল ফিতানঃ হাদীস নং - ৭৬৪)


হাদীসের সারাংশ এরকম যে, প্রথমে ইসলামিক মাগরিব (মরোক্কো, তিউনেসিয়া, আলজেরিয়া, লিবিয়া ও মিশরের) লোকজন, যারা মারওয়ান ও ফুজায়া গোত্রের লোকজন আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ নামক এক ব্যক্তির আওতায় কালো পতাকার নিচে একত্রিত হবে। এবং তারা ইসলামিক মাগরিব বিজয়ী হয়ে মিশর পর্যন্ত জয় করবে। ঠিক তখনই মিশরের প্রেসিডেন্ট পালিয়ে ইউরোপ চলে যাবে এবং ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার জন্য  ইউরোপ ও আমরিকার নিকট সাহায্য চাইবে। এর পর আবকা জাতির পক্ষ থেকে আব্দুল্লাহ আব্দুর রহমান হিন্দ নামের আরেকজনের নেতৃত্বে হলুদ পতাকাবাহী দল আত্মপ্রকাশ করবে। তিনি কালো পতাকাবাহী দলকে পরাজিত করে মাগরিব অঞ্চল (মরোক্কো, তিউনেসিয়া, আলজেরিয়া, লিবিয়া ও মিশর) মুক্ত করবেন এবং সিরিয়ার হোমস নগরীতে ১৬মাস অবরুদ্ধ করার পর জয়লাভ করবে এবং সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক জয় করবে। আর তাদেরকেই আবকা জাতি বলা হবে, যারা অর্ধেক সিরিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখবে । আর এই হলুদ পতাকাবাহী বর্বর আবকা জাতিকে হাদিসের ভাষায় নিকৃষ্ট জাতি বলা হয়েছে। তারা নির্বিচারে নারী পুরুষ সবাইকে হত্যা করবে। এর কিছু দিন পর আসমানের নিচে সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোকটি (অর্থাৎ প্রথম সুফিয়ানী) আত্মপ্রকাশ করবে এবং আসহাব ও আবকা উভয় দলের উপর সে বিজয়ী হবে। আর আবকা জাতি সুফিয়ানীর কাছে পরাজিত হয়ে মিশরে চলে যাবে। আর আসহাব জাতি সুফিয়ানীর কাছে পরাজিত হয়ে ইরাকের কূফা নগরীতে অবস্থান করবে।


( চলবে............ )

Popular posts from this blog

ইমাম মাহদী কোথায় জন্মগ্রহণ করবেন? আমরা তাকে কোন দলে খুঁজে বের করব?

ইমাম মাহদীর আবির্ভাব হবে ২০২৮ সালে (ইনশাল্লাহ)

ফোরাত নদীর তীরে সোনার পাহাড় কোথায় এবং কবে ভেসে উঠবে? (২০২৩ সালে ইনশাল্লাহ)