ইমাম মাহদী ও হযরত ইসা (আঃ) এর আত্নপ্রকাশ একই যুগে হবে না? ইমাম মাহদীর মৃত্যুর পর কারা পর্যায়ক্রমে খলিফা হবেন?

আমাদের মুসলমানদের মধ্যে একটি ভূল ধারণা হচ্ছে, ইমাম মাহদীর যুগেই হযরত ঈসা (আঃ) আকাশ থেকে অবতরণ করবেন। তাদের ধারণাটা অনেকটা এরকম যে, ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের পরেই তিনি সুফিয়ানীকে হত্যা করবেন, ঈসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ইহুদীদের কচুকাটা করবেন এবং জেরুজালেমকে খিলাফতের রাজধানী বানাবেন। ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ভারত বিজয় করবেন। রাশিয়া, আমেরিকা, ও ইউরোপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধে জয়লাভ করবেন। তারপর তার সময়েই দাজ্জাল আত্নপ্রকাশ করবে, এবং সর্বশেষ হযরত ঈসা (আঃ) আকাশ থেকে অবতরণ করে ইমাম মাহদীর পিছনে নামাজ পরবেন এবং দাজ্জাল কে হত্যা করবেন। অর্থাৎ ইমাম মাহদীর শাসন কাল ৭ বছরের মধ্যেই সব কিছু হয়ে যাবে। তারপর ঈসা (আঃ) ৪০ বছর রাজত্ব করবেন, তারপর সকল ইমানদার মুসলমানগন একযোগে মৃত্যু বরণ করবেন। অর্থাৎ আগামী ৪৯ বছরের মধ্যে সব কিছু ঘটে যাবে। কিন্তু আসলেই কি তাদের ধারণা মত এরকম হবে? নাকি ইমাম মাহদী ও ঈসা (আঃ)  আলাদা দুটি যুগে আসবেন?


♣️কেন তারা এরকম ধারণা করছেন?
______________________________________

** হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "সেদিন কেমন হবে, যখন মরিয়মের পুত্র হযরত ঈসা (আঃ) তোমাদের মাঝে অবতরণ করে তোমাদেরই একজনের পিছনে ফজরের নামাজ আদায় করবেন"?   (সহিহ বুখারী)


⚫উল্লেখ এই হাদিসে কোথাও ইমাম মাহদীর কথা উল্লেখ করা হয়নি, বরং এখানে স্পষ্ট করে "তোমাদের ইমামের " কথা বলা হয়েছে।

** হযরত জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "আমার উম্মতের একদল মুজাহিদ কিয়ামত পর্যন্ত শত্রুর উপর বিজয়ী থাকবে। একপর্যায়ে আকাশ থেকে ঈসা ইবনে মারিয়ম (আঃ) অবতরণ করলে মুসলমানদের সেনাপতি বলবে- আসুন, নামাজের ইমামতি করুন! তখন ঈসা (আঃ) বলবেন - না, বরং তোমাদের একজন অপরজনের নেতা (অর্থাৎ তুমি ইমামতি কর)। এটি এই উম্মতের জন্য আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে একটি বিরাট সম্মানের"।
(সহিহ মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)

⚫এই হাদিসেও ইমাম মাহদীর কথা বলা হয়নি, বরং বলা হয়েছে, "তোমাদের একজন অন্যজনের আমীর"।


** হযরত আবু সাঈদ খুদুরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "ঈসা ইবনে মারিয়ম (আঃ) যার পিছনে নামাজ পরবেন, তিনি তোমাদের মধ্য থেকেই একজন"। 

(হাদিসের মানঃ সহিহ, "কিতাব আল মাহদী" লেখকঃ হাফিজ আবু নাঈম রহঃ "ফাইয়াদ আল কাদির" লেখকঃ আল মানাওয়ী)


⚫এই হাদিসেও কোথাও ইমাম মাহদীর কথা উল্লেখ করা হয়নি, বরং এখানেও "তোমাদের একজনের" কথা বলা হয়েছে।

** হযরত উসমান ইবনে আবুল আস (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)কে বলতে শুনেছি, “হযরত ঈসা (আ.) ফজরের নামাযের সময় অবতরণ করবেন। তখন 'মুসলমানদের আমীর' তাঁর নিকট আবেদন জানাবেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি নামাজের ইমামতি করুন । তিনি বলবেন, এ উম্মত একে অন্যের উপর আমীর (অর্থাৎ তোমাদের জন্যই নামাজের ইকামত দেওয়া হয়েছে, তাই তোমরাই নামাজ পরাও) তখন আমীর অগ্রসর হয়ে নামায পড়াবেন।”


(মুসনাদে আহমদ, ৪র্থ খণ্ড, ২১৬ পৃষ্ঠা/ দুররে মানসুর, ২য় খণ্ড, ২৪৩ পৃষ্ঠা/ মুসতাদরাকে হাকিম, ৪র্থ খণ্ড, ৪৭৮ পৃষ্ঠা)


⚫এই হাদিসেও ইমাম মাহদীর কথা কোথাও বলা নেই, বরং বলা হয়েছে "মুসলমানদের আমিরের" কথা। তাই বেশিরভাগ আবেগী মুসলমান মনে করেছেন, এসকল হাদিস গুলোতে  মুসলমানদের ইমাম বলতে, ইমাম মাহদীর কথা বলা হয়েছে। যদিও এই ধারণাটি একদমই ঠিক নয়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর এমন কোন সহিহ, হাসান ও জয়িফ হাদিসে ও সরাসরি বলা হয়নি যে, হযরত ঈসা (আঃ) ও মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ আল মাহদী একই সময়ে আত্নপ্রকাশ করবেন। বরং অসংখ্য হাদিস রয়েছে, যে হাদিস গুলো নিয়ে গবেষণা করলে বুঝা যায়, হযরত ঈসা আঃ ও ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের মধ্যে রয়েছে বিশাল একটা সময়ের ব্যবধান।



♣️ইমাম মাহদী ও হযরত ঈসা (আঃ) একই সময়ে আবির্ভাব হবেনা, তার প্রমাণ সমূহ -
____________________________________________________

(১)  হযরত আবূ হুরাইরাহ (রাঃ)থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "ক্বিয়ামাত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না কাহ্‌তান গোত্র থেকে এমন এক লোক বের হবে, যে মানুষকে লাঠি দিয়ে তাড়িয়ে দেবে"।
(সহিহ বুখারী, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৬১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৩২)


⚫যদি ইমাম মাহদী ও ঈসা (আঃ) একই সময়ে আত্নপ্রকাশ হয়, তাহলে তিনি কখন খলিফা হবেন? এই কাহতানী খলিফা সম্পর্কে আরো স্পষ্ট করে বলা হয়েছে কিতাবুল ফিতানের এই হাদিসটিতে।

** হযরত আরতাত (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, মাহদির মৃত্যুবরণ করার পর কাহতানগোত্রের উভয় কান ছিদ্রবিশিষ্ট একজন লোক শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করবে। তার চরিত্র হবে হুবহু মাহদির মত। তিনি দীর্ঘ ২০ বৎসর পর্যন্ত শাসক হিসেবে থাকার পর, তাকে অস্ত্রের হত্যা করা হবে। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর বংশধর থেকে জনৈক লোকের আত্মপ্রকাশ হবে। যিনি উত্তম চরিত্রের অধিকারী হবেন। তার হাতে কায়সার সম্রাটের শহর(ইউরোপ) বিজয় হবে। তিনিই হবেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর উম্মতের মধ্যে সর্বশেষ খলীফা বা বাদশাহ। তার যুগে দাজ্জালের আবির্ভাব হবে এবং সায়্যিদুনা হযরত ঈসা (আঃ) আসমান থেকে অবতরণ করবেন।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১২৩৪ ]


(২)  হযরত জাফর সাদিক (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "কিভাবে আমার উম্মত ধ্বংস হয়ে যাবে? যখন এই উম্মতের শুরুতে আমি মুহাম্মদ (সাঃ) আছি, মধ্যখানে মাহদী রয়েছে, আর এই উম্মতের শেষে হযরত ঈসা ইবনে মারিয়ম (আঃ) রয়েছেন?।
(মিশকাত, হাকেম,কানজুল উম্মাল, রাজেন, তারিখে দিমাশক, তারিখ উল খিলাফাহ)


(৩)  হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আমার উম্মত ধ্বংস হয়ে যাবে না, কারণ (এই উম্মতকে পরিচালনা করার জন্য) শুরুতে আমি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও শেষে রয়েছেন মরিয়মের পুত্র হযরত ঈসা (আঃ)। আর আমাদের দুইজনের মধ্যখানে রয়েছেন ইমাম মাহদী ।
(এই হাদিসটি হাফেজ আবু নাঈম ও ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহঃ এর "মুসনাদে আহমাদ" গ্রন্থে সংগ্রহ করেছেন, এছাড়াও নুয়াইম বিন হাম্মাদের "আল ফিতান" এবং জালাল উদ্দিন সুয়ুতীর "আল আরিফুল আরদি ফি আখবার আল মাহদী" বইতেও রয়েছে)


(৪) হযরত জাবের বিন সামুরা (রাঃ) হতে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) কে আমি বলতে শুনেছি যে, এই দ্বীন (ধর্ম) প্রতিষ্ঠিত থাকবে ততদিন পর্যন্ত, যতদিন না তোমাদের মাঝে ১২ জন খলিফাহ না আসে। তারা সবাই তাদের প্রত্যেক উম্মতকে নিজের নিকট একত্রিত করবে। সাহাবী বলেন, তারপর রাসুল (সাঃ) একটি কথা বললেন, তা আমি বুঝতে পারিনাই। আমি আমার পিতাকে প্রশ্ন করলাম রাসুল (সাঃ) কি বলেছেন?  পিতা বললেন, তিনি বললেন, খলিফাহ সকলেই কুরাইশদের মধ্য থেকেই হবে।
 ( সহিহ মুসলিম, আবু দাউদ - ৪৯৭৯)


"উক্ত ১২ জন খলিফা সবাই হবেন কুরাইশ বংশের এবং তারা প্রত্যেকেই খেলাফতের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকবেন এবং মুসলিমদেরকে ঐক্যবদ্ধ করবেন।শিয়া সম্প্রদায়ের মতে, ১২ জন খলিফাই হলেন আহলে বাইত তথা, হযরত আলী (রাঃ) এর বংশধর থেকে, এবং এই মতটি হল বাড়াবাড়ি ও ভূল। যদিও হাদিসে কুরাইশদের কথা বলা হয়েছে, আহলে বাইতের কথা বলা হয়নি"। (তাফসীর ইবনে কাসীর)

⚫তবে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা’আর মতে, এখন পর্যন্ত ৪/৫ জন খলিফা হয়েছেন, অর্থাৎ১২ জন খলিফার এখনো আত্নপ্রকাশ হয়নি। যেমনঃ
١, হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ)
٢, হযরত উমর ফারুক (রাঃ)
٣, হযরত উসমান ইবনে আফ্ফান (রাঃ)
٤, হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (রাঃ)
٥, হযরত উমর ইবনে আব্দুল আজিজ (রাঃ)
তার মানে, ইমাম মাহদীর মৃত্যুর পরেও অনেক কুরাইশ বংশের খলিফা হবেন। কিন্তু কারা হবে তা নিচে আলোচনা করা হবে।

(৫) হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "আমার (মৃত্যুর) পর আসবে খিলাফত, তার পর আসবে রাজতন্ত্র, তারপর অত্যাচারী রাজার শাসন, তার পর আবার অত্যাচারী রাজার শাসন। তারপর আরেক অত্যাচারী ব্যাক্তির পর আমার বংশধর(ইমাম মাহদী) থেকে একজন আসবে। যিনি পৃথিবীকে ন্যায় বিচার দ্বারা পরিপূর্ণ করে দিবেন। তার পর আসবে কাহতানী। এটা এরকম সত্য, যেমনি ভাবে আল্লাহ আমাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন, এর ব্যতিক্রম কখনো হবেনা"।

(কানজুল উম্মাল, হাদিস নং - ৩৮৭০৪, নুয়াইম বিন হাম্মাদের রচিত "কিতাবুল ফিতানে" হাদিসটি আব্দুর রহমান বিন কায়েস বিন জাবের আল সাদাফী থেকে বর্ণিত হয়েছে)


(৬) উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, মাহদী সাত বছর রাজত্ব করে মারা যাবে, মুসলমানরা তার জানাজার নামাজ আদায় করবে "। (শুধুমাত্র প্রাসঙ্গিক অংশটুকু উল্লেখ করা হয়েছে)
(আবু দাউদ)

⚫যদি ইমাম মাহদী ও ঈসা (আঃ) একই সময়ে আবির্ভাব হতো, তাহলে ঈসা (আঃ) ই মাহদীর মৃত্যুর পর জানাজা নামাজ পড়াতেন, কারণ ঈসা (আঃ) থেকে যোগ্য ইমাম পৃথিবীতে কেউ থাকত না। এখানে স্পষ্ট করে বলা আছে, মাহদীর জানাজার নামাজ মুসলমানরাই আদায় করবেন, ঈসা (আঃ) নয়।


(৭) অপর এক বর্ণনায় বলা হয়েছে, "মাহদীর মৃত্যুর পর কোন কল্যাণ থাকবে না" 

(শুধুমাত্র প্রাসঙ্গিক অংশটুকু উল্লেখ করা হয়েছে)
(মুসনাদে আহমাদ, হাদিসটি ড. আরেফী রচিত "মহা প্রলয়" বইতেও রয়েছে)

⚫মাহদীর মৃত্যুর পর পুনরায় বিশৃঙ্খলা, যুদ্ধ বিগ্রহ শুরু হবে এবং রক্তপাত ছড়িয়ে পরবে যার কারণে হাদিসে বলা হয়েছে, কোন কল্যাণ থাকবে না।


(৮) হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, "দিন-রাত্রি ততক্ষণ পর্যন্ত শেষ হবে না, যতক্ষণ না জাহজাহ নামক একজন কৃতদাস রাজত্বের মালিক না হয়"।
(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং - ৭২০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশনী - ৭০৪৫, ইসলামিক সেন্টার প্রকাশনী-৭১০১)


⚫এই ক্রীতদাস খলিফার ব্যাপারে কিতাবুল ফিতানে একটি হাদীস রয়েছে। তিনি ইমাম মাহদীর মৃত্যুর পর আহলে বাইতের দুজন খলিফা হবেন, তারপর মুজারী বংশ থেকে কয়েকজন খলিফা হবেন, ঐ সময় তিনি খলিফা হবেন।

** হযরত কা’বে আহবার (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যখন মানুষের মাঝে হত্যা ইত্যাদি বৃদ্ধি পাবে তখন লোকজন বলবে এ যুদ্ধ মূলতঃ কুরাইশদের সাথে সম্পৃক্ত। সুতরাং কুরাইশদেরকে হত্যা করলে তোমরা শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। একথা শুনার পর সকলে মিলে কুরাইশদেরকে এমন ভাবে হত্যা করবে, তাদের একজনও বাকি থাকবেনা। কিন্তু এরপর মানুষ নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে লিপ্ত হবে, যেমন জাহেলী যুগে লিপ্ত ছিল এবং গোলামদের (ক্রীতদাস থেকে) একজন মানুষের শাসন ক্ষমতা (খিলাফত) গ্রহণ করবে।

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১১৫২ ]


(৯) (নাজ্জাশীর ভাতিজা) হযরত যু-মিখবার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, “অদূর ভবিষ্যতে তোমরা রোমানদের (খ্রিস্টানদের) সাথে শান্তি চুক্তি করবে। পরে তোমরা ও তারা (খ্রিস্টানরা) মিলে তোমাদের পিছন দিককার(রাশিয়া) সাথে যুদ্ধ করবে। সেই যুদ্ধে তোমরা জয়ী হবে, গনিমত অর্জন করবে এবং নিরাপত্তা লাভ করবে। তখন এক খৃষ্টান ব্যক্তি ক্রুশ উঁচিয়ে ধরে বলবে, ক্রুশের জয়ী হয়ে গেছে। ফলে মুসলমানদের এক ব্যক্তি তাতে ক্রুদ্ধ হয়ে ক্রুশটিকে ভেঙ্গে ফেলবে। এই ঘটনার সুত্র ধরে রোমানরা (খ্রিস্টানরা) বিশ্বাসঘাতকতা (সন্ধি চুক্তি ভঙ্গ) করবে”।
(মিশকাত শরীফ, মহাযুদ্ধ অধ্যায়, দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ)

⚫ এই শান্তি চুক্তিটি হবে ১০ বছর বা, ৭ বছরের জন্য। ঐ সময়ে মুসলিম ও খ্রিস্টানরা মিলে তখনকার রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, ইরানের কারমান প্রদেশ আক্রমণ করবে এবং কুফা নগরীকে ধ্বংস করবে।যদি ইমাম মাহদীর আমলেই সব কিছু হয়, তাহলে এটি কিভাবে হবে? উল্লেখ্য এই যুদ্ধ বিরতি শান্তি চুক্তিটি কোন শাসকের সময় সম্পাদনা করা হবে তা পরবর্তীতে উল্লেখ করা হবে।


(১০)  হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে বুছর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, "খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে মহাযুদ্ধ ও কনিষ্ট্যান্টিনোপল (ইস্তাম্বুল) বিজয়ের মধ্যে ব্যবধান হল, ৬ বছর। আর সপ্তম বছরে দাজ্জাল আত্নপ্রকাশ করবে"।

(ইবনে মাজাহঃ হাদিসটি সহিহ)


** হযরত হিশাম ইবনে আব্দুর রহমান হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন আমার নিকট ঐ ব্যক্তি বর্ণনা করেছে, তিনি হযরত আলী (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন যে, আর মাহদী সফর করবে এমনকি সে বাইতুল মুকাদ্দাসে (জেরুজালেম) অবতরণ করবে। তখন গুপ্ত সম্পদগুলো (তাবূত আস সাকীনা) তার দিকে চলে আসবে। আর আরবী,(আরবগন) আজমী (অনারবী), যুদ্ধে লিপ্ত মানুষ, রোম (ইউরোপের দেশ সমূহ) এবং অন্যান্যরা কোন প্রকার যুদ্ধ ছাড়াই তার অনুগত্যে প্রবেশ করবে। এমনকি কুসতুনতুনিয়া (ইস্তাম্বুল) ছাড়াও অন্যান্য জায়াগায় মসজিদ স্থাপিত হবে। তবে তার আবির্ভাবের পূর্বে তার পরিবারের এক ব্যক্তি (হারস হাররাস) পূর্বাঞ্চল থেকে বের হবে। সে তার কাঁধে আট মাস তরবারী বহন করবে। সে যুদ্ধ করবে, অঙ্গ বিকৃতি করবে, এবং বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে অগ্রসর হবে কিন্তু সেখানে পৌছানোর পুর্বেই মারা যাবে।(হাদীসের শেষ অংশ উল্লেখ করা হয়েছে)

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১০০৯ ]


⚫এই দুটি সম্পুর্ন দুই রকম কথা বলা হয়েছে, কারণ দুটি হাদীস আলাদা দুটি যুগের জন্য প্রযোজ্য। যদি ইমাম মাহদী ও ঈসা (আঃ) একই সময়ে আত্নপ্রকাশ হয়ে থাকে তাহলে এই দুটি হাদীসের ব্যাখ্যা কি হবে?


(১১)  হযরত আবু বাহিলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, "দাজ্জালের আবির্ভাবের পূর্বে তিনটি বছর অনেক কষ্টকর হবে। এ সময় লোকজন দুর্ভিক্ষে পতিত হবে। আল্লাহ তায়ালা প্রথম বছর আকাশ কে নির্দেশ দিবেন এক তৃতীয়াংশ বৃষ্টি আটকে রাখার জন্য এবং জমিন কে নির্দেশ দিবেন এক তৃতীয়াংশ ফসল আটকে রাখার জন্য। দ্বিতীয় বছর আল্লাহ তায়ালা আকাশ কে নির্দেশ দিবেন দুই তৃতীয়াংশ বৃষ্টি আটকে রাখার জন্য এবং জমিন কে নির্দেশ দিবেন দুই তৃতীয়াংশ ফসল আটকে রাখার জন্য। তারপর তৃতীয় বছর আল্লাহ তায়ালা আকাশ কে নির্দেশ দিবেন সম্পূর্ণ বৃষ্টিপাত আটকে রাখার জন্য এবং জমিন কে নির্দেশ দিবেন সম্পূর্ণ ফসল আটকে রাখার জন্য। তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হল, তাহলে তখন মানুষ কিভাবে বেঁচে থাকবে? তিনি বললেন, তাহলিল (আল্লাহর একত্ববাদ ঘোষণা), তাকবির(আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা), তাহমিদের (আল্লাহর প্রশংসার) মাধ্যমে। এগুলোই মানুষের খাদ্যের প্রয়োজন পূরন করবে"।
(সুনানে আহমদ)


** হযরত আবু সাইদ খুদুরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "আখেরি জমানায় আমার উম্মতের মাঝে মাহদীর আবির্ভাব হবে। আল্লাহ তায়ালা তার উপর কল্যাণের বারিধারা বর্ষন করবেন। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে সকল গচ্ছিত সম্পদ উত্তোলন করা হবে। তিনি ধন সম্পদের সুসম বন্টন নিশ্চিত করবেন। গবাদি পশু বৃদ্ধি পাবে এবং মুসলিমরা তাদের হারানো গৌরব ফিরে পাবে"।

(মুস্তাদরাকে হাকেম, সনদ সহিহ)


⚫এখানেও দুটি হাদীসে দুই রকম কথা বলা হয়েছে, কারণ দুটি হাদীস আলাদা দুটি যুগের জন্য প্রযোজ্য। যদি ইমাম মাহদী ও ঈসা (আঃ) একই সময়ে আত্নপ্রকাশ হয়, তাহলে এই দুটি হাদীস কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন? এই দুটি হাদীস থেকেও বুঝা যায়, ইমাম মাহদী ও ঈসা (আঃ) একই সময়ে আত্নপ্রকাশ হবে না।



♣️ইমাম মাহদীর মৃত্যুর পর কারা খলিফা হবেন?
____________________________________________

** হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, মাহদীর মৃত্যুর পর (মুজার বংশের) এমন একজন শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করবেন, যিনি ইয়েমেন বাসীদেরকে তাদের এলাকা থেকে বিতাড়িত করে দিবেন। অতঃপর (ইয়েমেনী) খলিফা মনসুর ক্ষমতার মালিক হবেন। এরপর মাহদী (আসবাইগ ইবনে ইয়াজিদ) নামে আরেকজন শাসনভার গ্রহন করবেন, যার হাতে রোমানদের শহর বিজয় হবে।

(আল ফিতানঃ নুয়াইম বিন হাম্মাদ-১১৮৬)


** হযরত ওয়ালিদ (রহঃ) থেকে বর্নিত তিনি বলেন, আখেরী জমানায় মাহদী পৃথিবীর শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করবে, তার যুগে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা হবে। অতপর তার মৃত্যুর পর আহলে বাইতের আরেকজন ইনসাফগার লোক ক্ষমতা গ্রহণ করবে। তার মৃত্যুর পর এমন (মুজার বংশের) একজনের হাতে ক্ষমতা যাবে, সে সবসময় মানুষের উপর জুলুম অত্যাচার করতে থাকবে। একপর্যায়ে তাদের বংশের একজন ক্ষমতাসীন হবে এবং ইয়েমেন দখল করবে। এরপর পরই তার উপর আক্রমণ করে তাকে হত্যা করা হবে এবং মুহাম্মদ নামের একজনকে শাসক নিযুক্ত করা হবে। কতক ওলামায়ে কেরাম বলেন, তিনি ইয়েমেনের বাসিন্দা হবেন এবং তার মাধ্যমেই ভয়ংকর যুদ্ধ (আমাক প্রান্তের মহাযুদ্ধ) সংঘটিত হবে।

(আল ফিতানঃ নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১১৮৫)


** হযরত কা’ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, মাহদীর মৃত্যু হলে আহলে বাইতের (রাসূলুল্লাহ সাঃ এর বংশের) জনৈক লোক মানুষের যিম্মাদারী (খিলাফত) গ্রহণ করবে। তার মাঝে ভালো-খারাপ সবকিছু থাকলেও তার ভালো কাজ থেকে খারাপ কাজ অনেক বেশি হবে। তিনি মানুষের উপর খুবই রাগান্বিত হবে এবং মানুষের ঐকতাবদ্ধতার মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করতে থাকবে। তবে তার হুকুমতের স্থায়িত্ব থাকবে খুবই কম সময়ের জন্য। তার অবস্থা দেখে আহলে বাইতের (রাসূলুল্লাহ সাঃ এর বংশের) অন্য আরেকজন লোক তার উপর হামলা করার মাধ্যমে তাকে হত্যা করবে। এরপর লোকজনের মধ্যে ভয়াবহ যুদ্ধ সংগঠিত হবে। এভাবে যুদ্ধ-বিগ্রহ চলার পর খুবই কম সংখ্যক মানুষ জীবিত থাকবে। এরপর আরো অনেক লোক মারা যাবে। অতঃপর পশ্চিমাদের মুজার গোত্রের আরেকজন লোক ক্ষমতা গ্রহণ করবে। সে মানুষকে কুফরীর প্রতি দাওয়াত দিবে এবং তাদের দ্বীন থেকে বের করে নিয়ে আসবে। দুই নাহরের (নদীর) মাঝামাঝি যায়গায় তার সাথে ইয়ামান বাসিদের যুদ্ধ সংগঠিত হবে এবং আল্লাহ তাআলা ঐ লোক এবং তার সাথে থাকা সবাইকে পরাজিত করবেন।

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১১৩৫ ]


⚫এই হাদিসগুলো থেকে বুঝা যায়, ইমাম মাহদীর মৃত্যুর পর আহলে বাইতের দুজন লোক খলিফা হবেন। তার পর মুজার বংশের লোকজন খলিফা হবেন। তারপর ইয়েমেনের লোকজন খলিফা হবেন।
** হযরত আবু উমাইয়া আয্যিমারী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমাকে খুবই চিন্তিত মনে হচ্ছে, কারণ কি? জবাবে তিনি বলেন, জিফারের কবরে একটি পাথর পাওয়া গিয়েছে, যার মধ্যে লেখা রয়েছে যে, তোমাদেরকে ক্ষমতা গ্রহনের এখতিয়ার দেয়া হলো, এরপর ক্ষমতা খুব ভালোভাবে পরিচালনা কর। তবে একদিন সেটা দুর্গন্ধময় হয়ে যাবে। যদি ভালো হয় তাহলে প্রশংসিত হবে এবং অনেক মর্যাদাবান হতে পারবে। এক সময় (ক্রীতদাস থেকে) আযাদ হওয়া (মুজার বংশের) লোকজন ক্ষমতা ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠবে, কিন্তু ক্ষমতার মালিক হবে হিমইয়ার(ইয়েমেন) এলাকার সম্মানীত লোকজন, এরপর সমাজের নিকৃষ্টত লোকজন ক্ষমতা হাতে নিবে, অতঃপর পারস্যবাসিরা (ইরানের লোকজন), অতঃপর কুরাইশ বংশের লোকজন, এরপর (আমাক প্রান্তের) তীব্র যুদ্ধ সংগঠিত হবে। প্রত্যেকবার প্রায় অর্ধেক অর্ধেক লোকজন মারা যাবে।

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১১৫৫ ]


⚫এই হাদিসটিতে অত্যন্ত সুন্দর ভাবে সিরিয়াল সহকারে বলা হয়েছে, ইমাম মাহদীর মৃত্যুর পর কারা খলিফা হবেন?
দুজন আহলে বাইতের খলিফার মৃত্যুর পর আফ্রিকা অঞ্চলের মুজার গোত্রের লোকজন বা, ক্রীতদাস থেকে মুক্ত হওয়া লোকজন খলিফা হবেন। তারপর কয়েকজন (১৫ জন) ইয়েমেনী খলিফা হবেন। তারপর নিকৃষ্ট লোকজন বা, মাখজুমী খলিফা মানুষ থেকে একজন খলিফা হবেন। তারপর ইরানের লোকজন খলিফা হবেন। তারপর পুনরায় কুরাইশ বংশের লোকজন খলিফা হবেন। আর ঐ সময়েই খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের আমাক প্রান্তের মহাযুদ্ধ হবে, কনিষ্টেন্টিনেপোল বিজয় হবে এবং সমগ্র ইউরোপ মুসলমানদের দখলে আসবে। তারপর দাজ্জালের আবির্ভাব হবে এবং ঐ সময়েই আসমান থেকে হযরত ঈসা (আঃ) অবতরণ করবেন।


♣️ নাজার বা, মুজার বংশের খলিফা বা, মাখজুমী বংশের খলিফাঃ
____________________________________________________

আফ্রিকার মুজার বংশের কয়েক জন খলিফা হবেন। ঐ সময় ক্রীতদাস থেকে একজন খলিফা হবেন (সহিহ মুসলিম-৭২০১)। তারা দীর্ঘদিন বায়তুল মোকাদ্দাসের নেতৃত্ব দিবে। ঐ সময় একজন বাদশাহর মেয়ে উলঙ্গ প্রায় পোষাক পরবে, যার কারণে লজ্জাস্থানের পশম দেখা যাবে, তারপর মসজিদের চারপাশে ঘুরবে। কেউ বিরোধিতা করলে তাকে হত্যা করা হবে। তাদের সময়ে মানুষকে সরাসরি কুফুরির দিকে আহবান করা হবে। (আল ফিতান - ১২১৮) । তখন লাখাম, জুদাম, এলাকা থেকে ইয়েমেনী বাসিন্দাদেরকে বের করে দেওয়া হবে। এবং প্রসিদ্ধ দুই নহরের (নদীর) মধ্যকার যুদ্ধ সংঘটিত হবে। একপর্যায়ে তাদেরকে হত্যা করা হবে। সম্ভবত এই বংশের খলিফা হবেন ৩ জন বা, তার বেশি।


** হযরত আব্দুর রহমান কাসেম (রহঃ) থেকে বর্নিত তিনি বলেন, তোমাদের এই মসজিদের (আল আকসা মসজিদের) আশেপাশে এমন একজন নারীকে ঘুরানো হবে, যার কাপড়ের ভিতর দিয়ে লজ্জাস্থানের পশম দেখা যাবে। ঐ সময় এসমন্ধে কেউ যদি বলে, আল্লাহর কসম! ! এটা ইসলাম সমর্থন করে না। তখন তাকে মারা যাওয়া পর্যন্ত মাটিতে পাড়ানো হবে। হায়!! আমি যদি সেই লোক হতাম, তাহলে কতইনা ভালো হতো"।

(আল ফিতানঃ নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১১৬৫)


** মুত্তালিব ইবনে হানতাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমীরুল মুমিনীন হযরত ওমর (রাঃ) প্রায় সময় বলতেন, "যারা মাখযুমীর খেলাফতের যুগ প্রাপ্ত হবে, যেন তাদের ধ্বংস হয়"।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১১৪১ ]


** হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, হে ইয়েমেন বাসী!!  যখন মুজার গোত্র তোমাদেরকে (লাখাম, জুদাম অর্থাৎ ইরাকের আনবার প্রদেশ ও সৌদি আরবের উত্তরাঞ্চল থেকে) বের করে দিবে, তখন তোমাদের কি অবস্থা হবে? জবাবে তারা বলল, হে আবু মুহাম্মদ!! সেটাও কি সম্ভব? উত্তরেঃ আব্দুল্লাহ ইবনে উমর বললেন, কসম সেই সত্তার (আল্লাহর) যার হাতে আমার প্রাণ!! হ্যাঁ এমনটাই হবে, তারা তোমাদের উপর জুলুম করবে। একথা শুনে জৈনিক ইয়েমেনী বলে উঠল, জালেম ও অত্যাচারী গন খুব শীঘ্রই জানতে পারবে, তাদের জন্য কি পরিনতি অপেক্ষা করছে? জবাবে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, আমি যদি জানতাম, তাহলে তোমাদের সাথেই অবস্থান করতাম।

(আল ফিতানঃ নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১১৯৫)


** হযরত সুলাইমান ইবনে ঈসা (রহঃ) থেকে বর্নিত,  আমার কাছে এই সংবাদ পৌঁছেছে যে, মাহদী দীর্ঘ ১৪ বছর যাবত বাইতুল মোকাদ্দাসের নেতৃত্ব দিয়ে মৃত্যু বরণ করবেন। তার মৃত্যুর পর মানযুর (কহতানী খলিফা) নামে আরেক সম্মানিত লোক আমীরের দায়িত্ব পালন করবে, এবং তিনি হবেন তুব্বা বাদশাহর বংশধরদের একজন। তিনি দীর্ঘ ২১ বছর যাবত বাইতুল মোকাদ্দাসের নেতৃত্ব দিলেও ১৫ বছর খুব ভালো ভাবে ইনসাফ পূর্ন আচরণ করবেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিন বছর মানুষের উপর জুলুম নির্যাতন করতে থাকবে এবং তার পরবর্তী তিন বছর দূর্নীতি করতে থাকবে এবং কাউকে এক দিরহামও দিবে না, জিম্মিদেরকে তার সৈন্যদের মধ্যে বন্টন করে দিবেন। তিনি আমাক (সিরিয়ার উত্তর আলেপ্পো) এলাকায় মাওয়ালীদেরকে (নতুন ধর্মান্তরিত মুসলিম) বাকী রাখবেন। তিনি বনু ইসমাইলকে (আরবদের) গরু মাড়ানোর মত মাড়াতে থাকবে। তার বিরুদ্ধে মাওয়ালীদেরকে (নতুন ধর্মান্তরিত মুসলিম) অবস্থান নিতে যিনি উৎসাহিত করবেন, তার নাম কোন একজন নবীর নামের অনুরূপ হবে। তার উপনামও হবে নবীর উপনামের অনুরূপ হবে। আমাক (সিরিয়ার উত্তর আলেপ্পো) থেকে কিছু লোক তার কাছে যাওয়ার পথে মানসুরের সাথে সাক্ষাৎ হলে উভয় পক্ষ তীব্র যুদ্ধে জড়িয়ে যাবে এবং একপর্যায়ে তাকে [যিনি মানযুরের বিরুদ্ধে মাওয়ালীদের উদ্বুদ্ধ করবেন] হত্যা করা হবে। অতঃপর সে (মানযুর) মাওয়ালীদের (নতুন ধর্মান্তরীত মুসলিম) মালিক হয়ে যাবে এবং বনু ফাতহান ও বনু ঈসমাইলকে (আরবদের) দেশ থেকে বিতাড়িত করে দিবে। তারা (বনু ফাতহান ও বনু ঈসমাইল) অবশ্যই আরবদের দুই বড় শহরে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করবে। সেই দুটি বড় শহর নাম হচ্ছে মদিনা ও সানা (ইয়েমেনের রাজধানী)। যার হাতে তুর্কি ও রোমানরা বিতাড়িত হতে বাধ্য হবে। একপর্যায়ে তারা (তুর্কি ও রোমানরা) উভয়দল এন্তাকিয়া (সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুরস্কের একট শহর) নগরীর আমাক (উত্তর আলেপ্পো) থেকে শুরু করে ফিলিস্তিনের আকা পর্যন্ত (তুরস্ক, সিরিয়া, জর্ডান, লেবানন ও ফিলিস্তিন) বিশাল ভূখণ্ডের মালিক হয়ে যাবে। তিন বছর পর্যন্ত মাওয়ালীদেরকে রাজত্ব করার পর একপর্যায়ে তাকে (মানযুরকে) হত্যা করা হবে। এরপর দ্বিতীয় মাহদী (আসবাইগ ইবনে ইয়াজিদ) খিলাফতের দ্বায়িত্ব গ্রহণ করবে। তিনি রোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতঃ জয়লাভ করবেন এবং ইস্তাম্বুল শহরও জয় করে নিবেন এবং সেখানে তিনি ৩ বছর ৪ মাস ১০ দিন অবস্থান করবে। এরপর আকাশ ঈসা (আঃ) অবতরণ করবেন এবং উক্ত বাদশাহ ঈসা (আঃ) এর নিকট রাজত্ব হস্তান্তর করবেন।

(আল ফিতানঃ নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১১৮১)



♣️ইয়েমেনী খিলাফত বা, হিমইয়ার খিলাফতঃ
__________________________________________

⚫এরপর আসবে ইয়েমেনী খিলাফত বা, হিমইয়ারী খিলাফত। এসব ইয়েমেনী খলিফাদের পিতা হবেন ইয়েমেনী হিমইয়ার বংশের আর মাতা হবেন কুরাইশী। এসকল খলিফাগন হবেন নেককার ও চরিত্রবান। তাদের খিলাফত শুরু হবে" মনসুর " নামক একজন গোত্র নেতার মাধ্যমে। সম্ভবত হিমইয়ার খিলাফতের খলিফা হবেন ১৫ জন। এই খিলাফত হবে মুসলমানদের জন্য গৌরব ও সম্মানের।


** হযরত যু মিখবার (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বটি মূলতঃ হিমইয়ার (ইয়েমেনীদের) গোত্রের কাছে ছিল, পরবর্তীতে তাদের থেকে ছিনিয়ে নিয়ে কুরাইশদের হাতে অর্পণ করা হয়। তবে কিছু দিনের মধ্যে সেটা আবার তাদের কাছে ফিরে যাবে।

(আল ফিতানঃ নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১১৫৪)


হিমইয়ার রাজবংশের লোকজন খ্রিস্টপূর্ব ১১০ সাল থেকে ৫২৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ৬৩৫ বছর দক্ষিণ আরবের বর্তমান ইয়েমেন ওমান ও দক্ষিণ সৌদি আরবের কিছু অঞ্চল শাসন করত। একসময় তাদের অবস্থা দূর্বল হলে আবিসিনিয়ানরা তাদেরকে পরাজিত করে ইয়েমেন দখল করে নেয়। হাদীসে বলা হয়েছে কিয়ামতের পূর্বে একসময় মুজার বা, মাখজুমী বংশের খলিফাদের পরাজিত করে তারা আবার রাজত্ব কায়েম করবে।


** হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, তিনজন আমির ধারাবাহিক ভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসবেন। তাদের হাতে অনেক এলাকা বিজয় হবে, উক্ত খলিফাদের প্রত্যেকজন হবেন খুবই সৎ। তাদের একজন হবেন আল জাবের, আরেকজন হবেন আল মুকরাহ তৃতীয়জন হবেন যুল আসাব। তিনজন মোট ৪০ বছর ক্ষমতায় থাকবে। এই তিনজনের মৃত্যুর পর পৃথিবীতে আর কোন কল্যাণ থাকবে না। সকল কল্যাণ যেন তাদের সাথেই দূর হয়ে যাবে।

(আল ফিতানঃ নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১১৭৭)


** বিশিষ্ট সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, খিলাফতের দ্বায়িত্বে প্রথমে সিফাহ থাকবে, তারপর মনসুর, জাবের, মাহদী, আল আমিন, সীন সালাম। অতঃপর কা'ব ইবনে লুরাই বা, লুইয়াই এর বংশধর থেকে ৬ জন খলিফা হবেন। তার পর আসবেন কাহতান গোত্রের একজন লোক। এদের মত নেককার লোক সাধারণ দেখা যায় না।

(আল ফিতানঃ নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১২০৪, ১২০৫)


** হযরত কা’ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, মানসুর হিমইয়ার ১৫ জন খলিফার মধ্য থেকে পঞ্চম খলিফা হবেন "।

(আল ফিতানঃ নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১২১০)


⚫উল্লেখ হিমইয়ার খিলাফত বা, ইয়েমেনী খিলাফতের সময়ে কাহতানী বংশের একজন খলিফা হবেন (সহিহ বুখারী - ৬৬৩২) যিনি সকল মুসলমানদের একত্রিত করবেন এবং রোমানদেরকে তাদের এলাকা থেকে বের করে দিবেন। তার হাতেই রোমানদের অনেক এলাকা বিজয় হবে এবং হিন্দুস্তান বিজয় হবে। তাই হিন্দুস্তানের যুদ্ধ নিয়ে মনগড়া ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ বাদ দেয়া উচিত।


** হযরত কাইস আস সাদাফী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, মাহদীর পরে জৈনিক কাহতানী লোক শাসক নিযুক্ত হবেন। কসম সেই সত্তার, যিনি আমাকে হক সহকারে প্রেরণ করেছেন। তার হাতেই বিজয় হবে।

(আল ফিতানঃ নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১২২১)


** হযরত আরতাত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উক্ত ইয়ামানী খলীফার (একজনের) নেতৃত্বে কুস্তুনতুনিয়া (ইস্তাম্বুল) এবং রোমানদের এলাকা বিজয় হবে। তার যুগে দাজ্জালে আবির্ভাব হবে এবং হযরত ঈসা (আঃ) আগমন করবেন। তার আমলে ভারতের যুদ্ধ সংগঠিত হবে, যে যুদ্ধের কথা হযরত আবু হুরায়রা বলে থাকেন।

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১২৩৮]



♣️সর্বশেষ আহলে বাইতের দুজন খলিফা হবেনঃ
____________________________________________

⚫তবে এসব ইয়েমেনী খলিফাদের সর্বশেষ দুইজন খলিফা সরাসরি কুরাইশ বংশের বনু হাশেম গোত্রের হবেন। প্রথম খলিফা ৪০ বছর শাসন করবেন, তার সময় রোমানদের সাথে মুসলিমদের শান্তি চুক্তি হবে, পিছনের দিকের শত্রু (রাশিয়া অঞ্চলের) বাদশাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ হবে, ইরানের কারমান প্রদেশ আক্রমণ করা হবে, কুফা নগরী ধ্বংস করা হবে। এবং শেষ খলিফার নাম হবে আসবাইগ ইবনে ইয়াজিদ। তার সময়েই আমাক প্রান্তের মালহামা বা, মহাযুদ্ধ অনুষ্ঠিত হবে। কনিষ্টেন্টিনোপল বা, ইস্তাম্বুল শহর বিজয় হবে, এবং সমগ্র ইউরোপ বিজয় হবে। দাজ্জালের আবির্ভাব হবে এবং আকাশ থেকে হযরত ঈসা (আঃ) অবতরণ করবেন। এই আসবাইগ ইবনে ইয়াজিদের পিছনেই তিনি নামাজ পড়বেন।


** হযরত মুহাম্মদ ইবনুল হানাফিয়্যাহ (রহঃ) থেকে বর্নিত তিনি বলেন, বনু হাশেমের একজন লোক বায়তুল মোকাদ্দাসের খলিফা নিযুক্ত হওয়ার পর গোটা পৃথিবীতে ন্যায় ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে এবং বায়তুল মোকাদ্দাসকে নতুন রুপে সংস্কার করবে। যা ইতিপূর্বে কেউ এরূপ সংস্কার করতে সক্ষম হয়নি। তিনি দীর্ঘ ৪০ বছর শাসন ক্ষমতা পরিচালনা করবেন। তার খিলাফতের ৭ বছর বাকী থাকতে রোমানদের সাথে একটি শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন হবে। কিছুদিন পরেই সেই চুক্তি ভঙ্গ করবে এবং তার বিরুদ্ধে আমাক প্রান্তে বিশাল সৈন্যবাহিনী জমা করবে। এ শোকে তিনি মৃত্যুবরণ করবেন। এরপর বনু হাশেমের জৈনিক লোক (আসবাইগ ইবনে ইয়াজিদ) তার স্থলাভিষিক্ত হবে, যার হাতে রোমানরা পরাজিত হবে এবং ইস্তাম্বুল নগরী বিজয় হবে। অতঃপর সে রোমিয়া (ইউরোপ) নগরীর দিকে অগ্রসর হতে থাকবে এবং সেটা জয় করার পর সেখানের গচ্ছিত রাখা সম্পদগুলো বের করে আনবে। এবং সেখানে থাকা সুলাইমান ইবনে দাউদ (আঃ) এর দস্তরখানাও থাকবে। তারপর বায়তুল মোকাদ্দাসে গিয়ে অবস্থান করবে। তার যুগেই দাজ্জালের আবির্ভাব হবে এবং হযরত ঈসা (আঃ) আকাশ থেকে অবতরণ করবেন। ঐ শাসকের পিছনেই হযরত ঈসা (আঃ) নামাজ আদায় করবেন।

(আল ফিতানঃ নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১২০০)


** হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একবার তিনি হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) কে সম্বোধন করে বলতে শুনেছি, আমাদের বংশের (বনু হাশেম গোত্রের) জৈনিক লোক ৪০ বছর পর্যন্ত শাসন ক্ষমতা পরিচালনা করবেন। তার খিলাফতের ৭ বছর বাকী থাকতে বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধ-বিগ্রহ শুরু হবে। অতপর আমাক (সিরিয়ার উত্তর আলেপ্পো) নামক স্থানে তার মৃত্যু হলে তার বংশের (বনু হাশেম গোত্রের) আরেকজন লোক খলিফা হবেন। তার হাতেই রোমানদের বিরুদ্ধে বিজয় হবে।
(আল ফিতানঃ নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১২১৯)
** হযরত আবু কুবাইল (রহঃ) থেকে বর্নিত তিনি বলেন, বনু হাশেমের জৈনিক লোক যার নাম আসবাইগ ইবনে ইয়াজিদ। তার হাতেই রোমানদের এলাকা বিজয় হবে"।

(আল ফিতানঃ নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১২২০)


তবে কিতাবুল ফিতানের ১১৮৫ নং হাদীসে ও ১৩৪৭ নং হাদীসে এই উম্মতের শেষ খলিফার নাম বলা হয়েছে মুহাম্মদ ও সালেহ।


⚫এই আসবাইগ ইবনে ইয়াজিদ বা, মুহাম্মাদ বা, সালেহ এর সময়েই আমাক প্রান্তের মহাযুদ্ধ বা, মালহামা সংগঠিত হবে। রোমানদের ৮০ টি পতাকাবাহী দল ৯,৬০,০০০ সৈন্য নিয়ে মুসলমানদেরকে চিরতরে ধ্বংস করে দিতে আসবে। এবং রোমানদেরকে সাহায্য করতে কনিষ্টেন্টিনেপোলের রাজা আরো ৬,০০,০০০ সৈন্যবাহিনী নিয়ে এগিয়ে আসবে। প্রায় ১৬ লক্ষ বিশাল সৈন্যবাহিনীর বিরুদ্ধে মুসলমানদের সৈন্য থাকবে (ইয়েমেন অঞ্চল থেকে ৭০,০০০+৮০,০০০) এবং হিমইয়ার অথবা, পারস্য অঞ্চল থেকে ৪০,০০০ সৈন্য। মোট প্রায় ২ লক্ষ সৈন্য বাহিনী। কিন্তু মুসলিম এক তৃতীয়াংশ (৭০,০০০) যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে যাবে। বাকী এক তৃতীয়াংশ (প্রায় ৬০,০০০) শহীদ হয়ে যাবে। বাকী এক তৃতীয়াংশকে আল্লাহ তায়ালা বিশাল ১৬ লক্ষ রোমানদের বাহিনীর উপর বিজয়ী করবেন। এবং এই যুদ্ধে রোমানদের সকল সৈন্যবাহিনীকে হত্যা করা হবে।
(আমাক প্রান্তের মহাযুদ্ধ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে মুসলিম শরীফের ৭১৭৩ নং হাদীসটি এবং কিতাবুল ফিতানের ১২৫২ ও ১২৫৪ নং হাদীসটি দেখুন)
এই যুদ্ধের পরেই কনিষ্টেন্টিনেপোল বিজয় হবে এবং সমগ্র ইউরোপ মুসলমানদের দখলে আসবে। তারপরই দাজ্জালের আবির্ভাব হবে এবং হযরত ঈসা (আঃ) আকাশ থেকে অবতরণ করবেন।



Popular posts from this blog

ইমাম মাহদী কোথায় জন্মগ্রহণ করবেন? আমরা তাকে কোন দলে খুঁজে বের করব?

ইমাম মাহদীর আবির্ভাব হবে ২০২৮ সালে (ইনশাল্লাহ)

ফোরাত নদীর তীরে সোনার পাহাড় কোথায় এবং কবে ভেসে উঠবে? (২০২৩ সালে ইনশাল্লাহ)