খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দল কেন ইরান আক্রমণ করবে? ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কালো পতাকাবাহী দলকে কী আমরিকা বা, অন্য কেউ সাহায্য করবে?


মুসলমানদের শেষ আশা ভরসার দল হচ্ছে খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দল, এই দল থেকেই উত্থান হবে ইমাম মাহদীর। যদিও হাদিসে আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নির্দেশ দিয়েছেন "বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে হলেও খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দলের সাথে যোগ দেয়ার জন্য"। কিন্তু ১৫০ কোটির বেশি মুসলিম থাকা সত্ত্বেও কেন খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দলের যোদ্ধার সংখ্যা মাত্র ৪/৫ হাজার হবে? এটা কী জানেন? উত্তর হচ্ছেঃ খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দলকে আমাদের সামনে এমন ভাবে উপস্থাপন করা হবে? যাতে বেশিরভাগ মুসলিম এই দলটির নাম শুনলেই এক বাক্যে উত্তর দিয়ে দিবেঃ তারা হচ্ছে, জঙ্গী, সন্ত্রাসী, নিরপরাধ মানুষ হত্যাকারী, ধর্ষণকারী, Terrorist, ঈসরাইলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন কারী, ইহুদী খ্রিস্টানদের দালাল, আমরিকার পোষা বাহিনী!!!!
তাই খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দলের বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা প্রয়োজন মনে করছি।

♦ আসলে খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দল কারা?
_________________________________________________

যেহেতু খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দল সম্পর্কে ইতোমধ্যেই বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে, তাই এখানে খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দল কোনটি? এব্যাপারে আলোচনা করব না। "খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুনঃ https://plus.google.com/101401526729996672060/posts/2bbxUdeVM4r

⚫তবে খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দলকে সহজ ভাবে চিনতে হলে কয়েকটি বিষয় জাচাই করতে হবে। যেমনঃ

১, আফগানিস্তানের উত্তর পূর্বাঞ্চল বা, কুন্দুজ, জালালাবাদ প্রদেশ (তালোকান) অঞ্চলের মানুষ যে দলের সাথে সংযুক্ত থাকবে, তারাই হল সত্যিকারের খোরাসানের বাহিনী দল।
"দরিদ্র পীরিত তালোকান অঞ্চল(আফগানিস্তানের উত্তর পূর্বাঞ্চল) সেখানে স্বর্ন, রৌপ্যের খনি নেই কিন্তু আল্লাহ্‌র রহমত দ্বারা পরিপূর্ণ। তারাই আল্লাহর রহমত দ্বারা স্বীকৃত, শেষ জমানায় তারাই হবে ইমাম মাহদীর সহযোগী "।
(লেখকঃ আল মুত্তাকী আল হিন্দিঃ আল বুরহান ফি আলামত আল মাহদী ফি আখিরুজ্জামান)

২, মধ্য এশিয়ার জিহাদী দল গুলো যেমন, IMU - Islamic movement of Uzbekistan, Cacusas emirates, vilayat kavkaz, Terkistan Islamic parties(পূর্ব তুর্কিস্থান) , Anser Al furkan(ইরান) যে দলের সাথে সম্পর্ক যুক্ত থাকবে, তারাই হচ্ছে সত্যিকারের কালো পতাকাবাহী দল। তবে মুমিনদের জন্য সুখবর হল, খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দলের উত্থানের সময়, বর্তমানে আল কায়দা ও ইসলামিক ইস্টেট(ISIS) এর মধ্যকার যে বিরোধ রয়েছে সেটি থাকবে না। বরং তখন এই অঞ্চলের সকল কালো পতাকাবাহী দল একত্রিত হয়ে সুফিয়ানীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।

৩, ফিলিস্তিন ও তার আশেপাশে যে দলটি দিন দিন শক্তিশালী হবে? সেই দলটিই হল সত্যিকারের খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দল। কারন, খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দল সুফিয়ানীর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় বার যুদ্ধের সময় পরাজিত হয়ে "শুয়াইব বিন সালেহ পালিয়ে বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকে চলে যাবে এবং মাহদীর জন্য একটি সুন্দর অবস্থান তৈরি করবে?" এরকম বর্ননা রয়েছে।
** হযরত যামরা ইবনে হাবীব (রহঃ) ও তার শাইখদের থেকে বর্ণিত যে, "অতপর (দ্বিতীয় বার) তাদের মাঝে ও সুফিয়ানীর অশ্বারোহীদের(ট্যাংক) মাঝে যুদ্ধ হবে। আর সে যুদ্ধে সুফিয়ানীর বিজয় হবে। আর হাশেমী পালায়ন করবে। আর শুয়াইব ইবনে সালেহ গোপনে বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে বের হয়ে যাবে। সে মাহদীর আবাস স্থল গোছাতে থাকবে" (হাদিসের শেষ অংশটি উল্লেখ করা হয়েছে) [ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৯১৫ ]
বর্তমানে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরে ইসলামিক ইস্টেট (ISIS) ছোট ছোট পাঁচটি দল রয়েছে। যেমনঃ  জাইশুল ইসলাম (গাজা), আনসার আল বাইতিল মাকদিস। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী মিশরের সিনাই উপত্যকার ইসলামিক ইস্টেট এর শাখা তো রয়েছেই। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যেই দলটির উপর আমাদের প্রত্যাশা ছিল সবচেয়ে বেশি সেই দলের কোন শাখাই ফিলিস্তিনে বর্তমানে নেই।

৪, সৌদি আরবে পরবর্তীতে যে কালো পতাকাবাহী দলটি দিন দিন শক্তিশালী হবে? সেই দলটিই হল সত্যিকারের খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দল। কারন সুফিয়ানীর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় বার যুদ্ধের সময় পরাজিত হয়ে মাহদী ও মনসুর কুফা (মসূল) শহর থেকে পালিয়ে মক্কায় চলে যাবে।

৫, খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দলের অন্যতম আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল, "তারা এমন ঘোরতর হত্যাকাণ্ড চালাবে, যা ইতিপূর্বে কেউ চালায় নি?" (সুনানে ইবনে মাজা; খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৩৬৭; মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫১০)
তাই যে দলটি সুফিয়ানী বাহিনীর (শিয়াদের) বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঘোরতর হত্যাকাণ্ড চালাবে। তারাই হল, সত্যিকারের খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দল। বর্তমানে ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, ইরান, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে বানু কাল্ব গোত্রের শাসক বাশার আল আসাদের সহযোগী শিয়াদের বিরুদ্ধে কারা ঘোরতর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, তা আর ডাক ঢোল পিটিয়ে বলে বেড়াতে হবে না, সবাই দুই চোখেই দেখতে পাচ্ছে।

৬, ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের বছর সৌদি আরবের মিনায় যারা(শিয়া) হাজীদেরকে পর্যন্ত হত্যা করতে দ্বিধাবোধ করবে না, অর্থাৎ তাদেরকে (শিয়াদের) মুসলমানই মনে করবে না, যদিও তারা হজ্জ্ব করে? তারাই হবে সত্যিকারের খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দল।
** হযরত আমর ইবনে শুয়াইব (রহঃ) তার পিতা থেকে এবং তার পিতা তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,  যুল কা’দাহ মাসে গোত্রদের দলভুক্ত করা হবে। আর উক্ত বছর হাজীদের লুট করা হবে। ফলে তখন মিনায় একটি বড় যুদ্ধ হবে। আর সেখানে অনেক হত্যাযজ্ঞ হবে। অনেক রক্ত প্রবাহিত হবে। এমনকি তাদের রক্ত আকাবায়ে জামরাহ পর্যন্ত প্রবহিত হবে। এমনকি তাদের সাথী (মাহদী) পালায়ন করবে। অতপর তাকে রুকুন ও মাকামের মাঝখানে নিয়ে আসবে। আর সে (খিলাফতের বাইয়াত নিতে) বিমুখ হবে। তাকে বলা হবে যদি তুমি অস্বীকার করতে, তহলে আমরা তোমার গর্দানে মারতাম(মেরে ফেলতাম)। তখন আহলে বদরের সমপরিমাণ (৩১৩ জন) লোক তার নিকট বাইয়াত গ্রহন করবে। তার এই বাইয়াত গ্রহনে আকাশ বাসী ও পাতাল বাসী সকলেই তার প্রতি খুশি থাকবে। [ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৯৮৬ ]

** হযরত আব্দদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেছেন, “লোকেরা যখন পালিয়ে হযরত মাহদির কাছে আগমন করবে, তখন মাহদি কাবাকে জড়িয়ে ধরে ক্রন্দনরত অবস্থায় থাকবেন। (হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন) আমি যেন তাঁর অশ্রু দেখতে পাচ্ছি? মানুষ ইমাম মাহদিকে বলবে, আসুন, আমরা আপনার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করি। ইমাম মাহদি বলবেন, আফসোস! তোমরা কত প্রতিশ্রুতিই না ভঙ্গ করেছ! কত রক্তই না ঝরিয়েছ! অবশেষে অনীহা সত্ত্বেও তিনি লোকদের থেকে বাইয়াত নেবেন। (হযরত আব্দদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন) ওহে মানুষ! তোমরা যখন তাঁকে পাবে, তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবে। কারণ, তিনি দুনিয়াতেও ‘মাহদি’, আসমান ও ‘মাহদি’।”  (মুস্তাদরাকে হাকেম)

এছাড়াও সত্যিকারের খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দলকে সঠিক ভাবে চিনার আরো অসংখ্য কারন রয়েছে। যা পরবর্তীতে আলোচনা করব। (ইনশাআল্লাহ)

 
♦ খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দল ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে?
____________________________________________________

** হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, "যখন সুফিয়ানী ও (খোরাসানের) কালো ঝান্ডাবাহী দলের সাথে সাক্ষাত ঘটবে, তখন সে দলের মাঝে বনু হাশেমের এক যুবক থাকবে। তার বাম তালুতে থাকবে বন্ধুত্ব বা কার্য সম্পাদনের শক্তি। আর উক্ত দলের সম্মুখভাগে বনু তামিমের এক ব্যক্তি থাকবে, যাকে শুয়াইব ইবনে সালেহ বলা হবে। তাদের সাক্ষাত ঘটবে বাবে ইস্তাখাররাতে (ইরানের ফার্স প্রদেশের একটি ঐতিহাসিক স্থানে)। তখন তাদের মাঝে বড় একটি যুদ্ধ হবে, সে যুদ্ধে কালো ঝান্ডাবাহী দল জয়ী হবে। এবং সুফিয়ানীর সৈন্য পলায়ন করবে। আর সে সময়ই মানুষ মাহদীর আকাংখা করবে এবং তাকে খুজতে থাকবে।

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৯১৪ ]

** হযরত যামরা ইবনে হাবীব (রহঃ) ও তার শাইখদের থেকে বর্ণিত যে তারা বলেন, সুফিয়ানী খোরাসানের আম্মাতুশ শিরকে(ইরানের ইস্পাহান শহর) ও পারস্যের (ইরানের) ভুমিতে তার সৈন্যবাহিনী ও অশ্বারোহী বাহিনী (ট্যাংক) বাহিনী পাঠাবে। অতপর পূর্বাঞ্চলের অধিবাসীরা তাদের (ইরানের) সাথে বিদ্রোহ করবে। ফলে তারা তাদের সাথে যুদ্ধ করবে এবং বিভিন্ন জায়গায় অনেক যুদ্ধ হবে। যখন তাদের মাঝে যুদ্ধ বিগ্রহ দীর্ঘস্থায়ী হবে তখন বনু হাশেমের এক ব্যক্তির (হারস হাররাস) নিকট বাইয়াত গ্রহন করবে। আর সে সেদিন পূর্বাঞ্চলের একেবারে শেষে থাকবে। অতপর সে খোরাসানবাসীদের নিয়ে বের হবে। উক্ত দলের সম্মুখে থাকবে বনু তামিমের আযাদকৃত গোলাম (শুয়াইব ইবনে সালেহ)। সে হবে হলুদ বর্ণের, পাতলা দাড়ি ওয়ালা।

(আল ফিতানঃ নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৯১৫)

** হযরত আবু জাফর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, সুফিয়ানী বাগদাদ ও কুফা (মসূল) প্রবেশের পর তার সেনাবাহিনীকে দূরবর্তী অঞ্চলে (ভাগ ভাগ করে) পাঠিয়ে দিবেন। তার পাঠানো (সৈন্যবাহিনীর) একটি অংশ খোরাসান বাসিদের নদীর (কাস্পিয়ান সাগরের) তীরে পৌঁছে দিবেন। তখন প্রাচ্যবাসীরা (মধ্য এশিয়ার কালো পতাকাবাহী যোদ্ধারা) তাদেরকে যুদ্ধের জন্য সাদর আমন্ত্রণ জানাবে। তখন সুফিয়ানীর সৈন্যবাহিনী (প্রানের ভয়ে) কুফাতে (মসূল) শহরে ফিরে যাবে। তারপর সুফিয়ানী বনি উমাইয়া গোত্রের একজনের নেতৃত্বে বিস্তীর্ণ প্রস্তরময় ময়দানে (ফার্স প্রদেশের ইস্তাখর নামক স্থানে) বিশাল একটি সৈন্যবাহিনী পাঠাবে। অতঃপর কুমুস (কোম শহর) , রি অঞ্চল (রাজধানী তেহরান) , খুমের জারিহ (তেহরানের পূর্বদিকের সারিহ শহরে) নামক স্থানে যুদ্ধ হবে। ঐ সময় সুফিয়ানী কুফা (মসূল) শহরের ও মদিনা বাসিদের হত্যার নির্দেশ দিবেন। এমনি সময় বনি হাশেম গোত্রের একজন যুবক (হারস হাররাস) সমস্ত মানুষদেরকে একত্রিত করার জন্য অনুমোদন করবেন এবং খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দলকে (সাহায্যের জন্য) গ্রহন করবেন। তার ডান হাতে বড় তিলক থাকবে। আল্লাহ তায়ালা যুবকটির সমস্ত কাজ ও পথকে সহজ করে দিবেন। তারপর খোরাসানের সীমান্তে যুবকটিকে (প্রতিপক্ষ) আক্রমণ করবে। তখন তিনি রি নামক (তেহরানের পাশের) রাস্তা দিয়ে চলে যাবেন। তারপর বনি তামীম গোত্রের একব্যাক্তি যাকে আঞ্চলিক ভাষায় শুয়াইব ইবনে সালেহ বলা হবে, সে ইস্তাখর ময়দানে  উমাইয়াদের (সুফিয়ানী বাহিনীর) দিকে (যুদ্ধের জন্য) বেড়িয়ে পরবে। তখন দুটি অংশের (দুটি রাষ্ট্রের) একটি একটি ভূখণ্ডে যুদ্ধ হবে এবং তাদের মধ্যে মারাত্নক যুদ্ধ বেধে যাবে। এমনকি অশ্বারোহী বাহিনীর রক্ত পায়ের গোড়ালির গিট পর্যন্ত জমে যাবে। তারপর বনি আদি গোত্রের একব্যাক্তির নেতৃত্বে সাজিস্তান থেকে বড় একটি সৈন্যদল এগিয়ে আসবে। আল্লাহ কিভাবে তাকে এবং তার সৈন্যদেরকে সাহায্য করবেন, তা প্রকাশ করবেন। তারপর (কালো পতাকাবাহী দল) রি নামক এলাকা (তেহরান) আক্রমণের পর মাদায়েন শহর (বাগদাদের নিকটবর্তী এলাকা) আক্রমণ করবে। সর্বশেষ আকের কুফা (ইরাক ও সিরিয়ার বর্ডারে) এলাকা আক্রমণ করে সবাইকে নিষ্কৃতি প্রদান করবেন। এরপর ঘোষণা দিয়ে বৃহৎ হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হবে বাকিল (ফার্স প্রদেশের সিরাজ শহরে) নামক স্থানে। অতঃপর বিপুল সংখ্যক লোকদেরকে তারা বাছাই করতে বের হবে এবং কুফা (মসূল) ও বসরা (ইরাকের) লোকদেরকে সংঘবদ্ধ করবে। এমনকি ঐ সময় কুফা (মসূল) শহরে (সুফিয়ানীর নিকট) যেসব যুদ্ধবন্ধি থাকবে, তাদেরকে উদ্ধার করবে।

(আল ফিতানঃ নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৯১৩)


♦ ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দলকে কী আমরিকা সাহায্য করবে?
____________________________________________________

এই মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে ঈসরাইল ও সৌদি আরব। আর যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে তাদের বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বী। মূলতঃ যুক্তরাষ্ট্র, ঈসরাইল বা, সৌদি আরবের সাথে ইরানের বিরোধের কারন হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ কে কেন্দ্র করে। তাই এই মূহুর্তে সিরিয়া ও ইয়েমেনে সৌদি আরব ও ইরান একটি প্রক্সি যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। এছাড়াও

১, সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, "ইরান চায় পুরো মধ্যপ্রাচ্য দখল করতে, তারা সৌদি আরবের পবিত্র মক্কা শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়? কিন্তু যুদ্ধে সৌদি আরব আক্রান্ত হবে না বরং পরবর্তী সময়ে যুদ্ধ ইরানের নিজের ভূখণ্ডেই স্থানান্তরিত হবে? আমরা চাই ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তাদের আগ্রাসী মনোভাবকে বন্ধ করতে, কিন্তু যদি আমরা ব্যর্থ হই তাহলে আগামী ১০/১৫ বছরের মধ্যে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সম্ভাবনা রয়েছে"। লিংকঃ https://www.thenational.ae/world/saudi-prince-mohammed-bin-salman-s-warning-to-iran-1.1616

২, রাশিয়া ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অভিযোগ করেছে, বর্তমানে আফগানিস্তানে ইসলামিক ইস্টেট (ISIS) এর ৭০০০ সক্রিয় যোদ্ধা রয়েছে (যদিও আমরিকার গোয়েন্দা সংস্থা CIA এর তথ্য মতে, এদের সংখ্যা ৩০০০)। যারা বিদেশী কোন বাহিনীর বিরুদ্ধে জিহাদ করতে আফগানিস্তানে আসেনি। বরং তারা উত্তর আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়াতে (তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কিমেনিস্থান) ঘাটি গাড়তে এসেছে। এবং এই যোদ্ধাদের বড় একটি অংশ এসেছে মধ্য এশিয়া ও রাশিয়া (চেচনিয়া, বসনিয়া) থেকে। মূলতঃ তুর্কিমেনিস্থান হল ইরানের সীমান্তবর্তী দেশ, তাই এই অঞ্চলে ইসলামিক ইস্টেট (ISIS) ঘাটি গড়তে পারলে সেটি ইরানের জন্য অবশ্যই চিন্তার বিষয়। রাশিয়া মনে করছে, এটি একটি ভয়াবহ চিন্তার বিষয়? তাই রাশিয়া আফগান তালেবানের সাথে মিলে ইসলামিক ইস্টেট (ISIS) কে নির্মূল করার জন্য সহযোগীতা করতে প্রস্তাব দিয়েছে। লিংকঃ http://alwaght.com/en/News/123055/Over-7,000-ISIS-Terrorists-in-Afghanistan-Seek-Expansion-to-Central-Asia-Russia

৩,  তালেবানরা তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে সাম্প্রতিক সময়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।  যার নাম হলঃ "আফগানিস্তানে আমরিকা ইসলামিক ইস্টেট (ISIS) কে কিভাবে প্রমোট করছে?"  এখানে তারা বেশ কিছু তথ্য ও প্রমাণ তুলে ধরেছে, যার মাধ্যমে তালেবানরা প্রমাণ করতে চেয়েছে আমরিকা আফগানিস্তানে সত্যিই ISIS কে সাহায্য করছে? লিংকঃ http://alemarah-english.com/?p=32341
এছাড়াও আফগানিস্তানের জাবুল প্রদেশে তালেবান ও আফগান সরকারি বাহিনীর যৌথ হামলার মুখে একপর্যায়ে ইসলামিক ইস্টেট (ISIS) এর ২৫০ যোদ্ধা তালেবানদের কে বাদ দিয়ে আফগান সরকারি বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। পরবর্তীতে দেখা গেছে, আফগান বাহিনী ইসলামিক ইস্টেট এর যোদ্ধাদের সাথে সৌহার্দ্য পূর্ন ব্যবহার করেছে এবং তাদের আহতদের চিকিৎসা প্রদান করেছে। যা ব্যপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল।

⚫যদি তালেবানদের অভিযোগ সত্য বলে ধরে নেই, তাহলে আফগানিস্তানে ইসলামিক ইস্টেট (ISIS) কে আমরিকা সাহায্য করার দুটি কারন থাকতে পারে? যথাঃ

١, তালেবানদের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিপক্ষ দাড় করিয়ে আফগানিস্তান ত্যাগ করা।

٢, আফগানিস্তান ও তার আশেপাশে ইসলামিক ইস্টেট (ISIS) কে শক্তিশালী করে ইরানকে প্রতিনিয়ত গেরিলা যুদ্ধ ও আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে  ইরানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়া এবং তাদের উপর সর্বাত্মক যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া।

আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আমরিকা ইসলামিক ইস্টেট (ISIS) এর মাধ্যমে ইরানের বিরুদ্ধে ভবিষ্যৎ যুদ্ধের পরিকল্পনা হিসেবেই স্থল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করতে চাচ্ছে। তাই এখন থেকেই তাদেরকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছে।

♦সাধারণ মুসলমানরা কেন খোরাসানের কালো দলের সাথে ব্যাপক হারে যুক্ত হবে না?
____________________________________________________

বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন জিহাদী দল যেমনঃ ইসলামিক ইস্টেট (ISIS), আল কায়দা, তাহরির আল শাম (HTS), আহরার আল শামের বিরুদ্ধে ইরান, হিজবুল্লাহ ও শিয়া মিলিশিয়াদের যুদ্ধ কারন হচ্ছে আকিদা গত কারনে। আর পুরো মধ্যপ্রাচ্যে শিয়াদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে আক্রমণাত্মক ও ভয়ংকর যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে ইসলামিক ইস্টেট (ISIS) । তারা শিয়াদেরকে ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, পাকিস্তান, আফগানিস্তানের ও ইরানে প্রতিনিয়ত হত্যা করেই চলেছে শুধুমাত্র আকিদাগত বিরোধের কারনে। তাই এর জেরে যদি খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দল ইরান আক্রমণ করে এবং আমরিকা, ঈসরাইল বা, সৌদি আরব যদি প্রত্যক্ষভাবে বা, পরোক্ষভাবে সহযোগীতা করে তাহলে আমরা কাকে সমর্থন করব? জঙ্গিদের সমর্থন করব? নাকি তথাকথিত ইসলামিক রিপাবলিক (!) অব ইরানকে সমর্থন করব?

١, যেহেতু রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নির্দেশ হচ্ছে, খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দলের সাথে যোগ দিতে হবে "এমনকি বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে হলেও" (ইবনে মাজাহ) যোগ দিতে হবে। তাই আমরা অবশ্যই খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দলের সাথেই যোগ দিব। যদিও এই দলটিকে আমরিকা, ঈসরাইল বা, সৌদি আরব তাদের স্বার্থের জন্য কাজে লাগাতে পারে।
 
٢, সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে আফগানিস্তান যুদ্ধের সময় (১৯৭৯-১৯৮৯) আমরিকা ও সৌদি আরব রাশিয়াকে অর্থনৈতিক ভাবে দেউলিয়া করতে ও প্রক্সি যুদ্ধে পরাজিত করতে সাহায্য করেছিল, এবং রাশিয়াকে পরাজিত করে ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতিশোধ নেয়াই তাদের লক্ষ্য ছিল। যদিও তখন আফগান মুজাহিদিনদের লক্ষ্য ছিল কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করে তাদেরকে আফগানিস্তান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া। ঐসময় বেশিরভাগ ওলামায়ে কেরাম আফগান মুজাহিদিনদের কে সমর্থন করেছেন এবং আমরিকার সাহায্য নেওয়াকেও জায়েজ মনে করছেন এবং পরবর্তী সময়ে এই আফগান মুজাহিদিনদের থেকেই উত্থান হয়েছিল জিহাদের বর পুত্র শাইখ ওসামা বিন লাদেন (রহঃ)। কিন্তু খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দল যখন ইরান আক্রমণ করবে, তখন ইরানী মিডিয়া ও ইরানপন্থী শিয়া আলেম ও মডারেট আলেমদের দিয়ে ফতোয়ার ফুল ঝুড়ি ফোটাবে এবং প্রচার করবে এটি কেবল ইরানের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ নয়, বরং ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। কিন্তু যদিও আমরিকা, ঈসরাইল বা, সৌদি আরব তাদের স্বার্থের জন্য খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দলকে সাহায্য করবে, তার পরেও এই দলটি থেকেই আগামী দিনের বিশ্ব নেতৃত্ব দান কারী ইমাম মাহদীর আবির্ভাব হবে, ঠিক যেমনিভাবে শাইখ ওসামা বিন লাদেন (রহঃ) এর উত্থান হয়েছিল।

٣, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আগমনের পূর্বে আরবের ইহুদীরা অন্য লোকদের বরাই করে বলত, শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আমাদের বংশ থেকেই জন্ম গ্রহণ করবেন। তারপর আমরা সেই নবীকে সাথে নিয়ে তোমাদেরকে কচুকাটা করব। ঠিক এই যুগে মধ্যপ্রাচ্যের শিয়ারা সারাদিন শুধু মাহদী, মাহদী বলে চিৎকার চেঁচামেচি করছে এবং স্বপ্ন দেখছে মাহদীকে নিয়ে তারা বিশ্ব শাষন করবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাবে, মক্কায় মাহদীর উত্থানের পর তারাই মাহদীকে হত্যা করতে ৭০,০০০ যোদ্ধা পাঠাবে।

তাই ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যদি খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দলকে আমরিকা বা, ঈসরাইল বা, সৌদি আরব প্রত্যক্ষভাবে বা, পরোক্ষভাবে সহায়তা করে থাকে তাহলে আশ্চর্য হওয়ার বা, নাক সিটকানোর কিছু নেই। শত বাধা বিপত্তি, ফতোয়ার ফুল ঝুরি, স্বত্বেও আমাদেরকে সত্যিকারের খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দলটিকে খুঁজে বের করতে হবে।

Popular posts from this blog

ইমাম মাহদী কোথায় জন্মগ্রহণ করবেন? আমরা তাকে কোন দলে খুঁজে বের করব?

ইমাম মাহদীর আবির্ভাব হবে ২০২৮ সালে (ইনশাল্লাহ)

ফোরাত নদীর তীরে সোনার পাহাড় কোথায় এবং কবে ভেসে উঠবে? (২০২৩ সালে ইনশাল্লাহ)