সিরিয়া নিয়ে দুবাই ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন জায়েদের নতুন কুটনীতিঃ

মিডিয়াতে হয়তো আমরা সৌদি আরবের প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমানকে দেখে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি মনে করি। কিন্তু পর্দার অন্তরালে মধ্যপ্রাচ্যের সবকিছুর কলকাঠি নাড়ছেন অন্য আরেকজন, তিনি হচ্ছেন দুবাই ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন জায়েদ(MBZ) মূলত তাকেই বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যের আসল ডন। ইয়েমেনের যুদ্ধ, খলিফা হাতফারের ত্রিপোলি অভিযান, সুদানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত, কাতার অবরোধ, মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত সবখানেই রয়েছে মুহাম্মদ বিন জায়েদের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ। নতুন করে সিরিয়া নিয়ে MBZ আবার কুটনীতি শুরু করেছেন। কি তার কুটনীতি? এটা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

⚫ কে এই মুহাম্মদ বিন জায়েদ?

New York Times মুহাম্মদ বিন জায়েদকে নিয়ে ২ জুন ২০১৯ "The most powerful Arab ruler isn't MBS it's MBZ" নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে তাকে আরব বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর এবং ধনী ব্যক্তি বলা হয়েছে। তার নিয়ন্ত্রিত দুবাই ইনভেস্টমেন্ট অথরিটির সম্পদের পরিমাণ ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার, একই সাথে বলা হয়েছে তিনি হচ্ছেন পুরো বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। লিংকঃ https://www.nytimes.com/2019/06/02/world/middleeast/crown-prince-mohammed-bin-zayed.html?action=click&module=RelatedCoverage&pgtype=Article&region=Footer
এছাড়াও ৯জানুয়ারি ২০২০ New York Times আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যার শিরোনাম ছিল "Mohammed bin Zayed dark vision of the middle East future's" এখানেও পুরো মধ্যপ্রাচ্যে তার প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। লিংকঃ https://www.nytimes.com/2020/01/09/magazine/united-arab-emirates-mohammed-bin-zayed.html


⚫ সিরিয়া যুদ্ধে আরব রাষ্ট্রগুলোর আগের অবস্থানঃ

২০১১ সালে আরব বসন্তে যখন একের পর এক আরব দেশগুলোর ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্টের মসনদ ক্ষসে পরছিল , বিশেষ করে তিউনিশিয়ার প্রেসিডেন্ট বেন আলী, মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক, ইয়েমেন আলী আবদুল্লাহ সালেহের পতন হয়েছিল। তখন আরো একটি দেশে আরব বসন্তের ছোঁয়া লেগেছিল, সেটি হল সিরিয়া। তখন থেকেই সিরিয়া সমস্যা কেবল সিরিয়ার ভূখণ্ডের ভিতরেই সীমাবদ্ধ ছিল না। বরং ‌তখন থেকেই আরব বিশ্ব ছাড়িয়ে পুরো বিশ্ব রাজনীতির প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আরব দেশগুলো, তুরস্ক ও আমেরিকা সিরিয়া যুদ্ধে বিদ্রোহীদের টাকা ও অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করেছে। তখন এর ব্যতিক্রম হয়নি সংযুক্ত আরব আমিরাত,তারাও সিরিয়া যুদ্ধে ফান্ডিং করেছিল বাশার আল আসাদকে পতন ঘটানোর জন্য। এছাড়া ইরান, রাশিয়া বাশার আল আসাদকে রক্ষার জন্য যোদ্ধা, অস্ত্র ও টাকা দিয়ে সহযোগিতা করে। এছাড়াও সিরিয়া যুদ্ধ তুরস্ক, জর্ডান ও ইউরোপের জন্য শরনার্থী সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও সিরিয়া যুদ্ধে যে কেবল বড় বড় মোড়লরাই ফান্ডিং করেছে এমন নয়, বরং বিভিন্ন জিহাদী গ্রুপ গুলো এখানে ফান্ডিং করেছে এবং পরবর্তীতে নিজেদের মধ্যে অন্তকোন্দল সৃষ্টি হয়েছে।

** হযরত আবুল আলিয়া (রহঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বললেন, হে লোক সকল! যতক্ষন পর্যন্ত শাম (সিরিয়া) দেশের দিক থেকে কোনো ফিৎনা আসবেনা, ততক্ষন তোমরা সেটাকে কোনো ফিৎনাই মনে করোনা। যখনই শামের(সিরিয়া) দিক থেকে ফিৎনা আসবে, সেটাই হবে, অন্ধ ফিৎনা।

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৬৬১ ]


** হযরত কা’ব (রহঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, প্রতিটি ফিৎনা প্রাথমিক অবস্থায় থাকবে, যতক্ষন পর্যন্ত সেটা শাম(সিরিয়ায়) দেশে প্রকাশ হবেনা। যখনই শাম(সিরিয়ায়) দেশে উক্ত ফিৎনা দেখা দিবে তখন বুঝতে হবে, সেটা চুড়ান্ত রুপ নিয়েছে।

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৬৬০ ]


** বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি এরশাদ করেন, প্রত্যেক ফিতনা বড়ই কঠিন। এবং সেই ফিতনাই একদিন প্রকাশ পাবে, শাম(সিরিয়া) নামক দেশটিতে। আর যখন উক্ত শামদেশে ফিতনার উদ্ভব হবে তখনই চতুর্দিকে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যাবে।

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৬৫৯ ]

⚫ সিরিয়া যুদ্ধের বর্তমান অবস্থাঃ

সিরিয়া যুদ্ধে বর্তমানে বাশার আল আসাদ অনেকটাই সুবিধা জনক অবস্থায় রয়েছে। রাশিয়ান এয়ার সাপোর্ট এবং ইরানি গ্রাউন্ড সাপোর্টে দেশের বেশির ভাগ এলাকাই পূনঃদখল করতে সামর্থ্য হয়েছে। শুধুমাত্র ইদলিব প্রদেশের কিছু এলাকা, উত্তর সিরিয়ায় তুরস্ক নিয়ন্ত্রিত কিছু এলাকা এবং কুর্দি নিয়ন্ত্রিত রাক্কা ও হাসাকা প্রদেশ ছাড়া দেশের বড় বড় শহরগুলো বাশার আল আসাদের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। এছাড়াও বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইদলিব প্রদেশে তিন দফায় তুরস্কের সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েও তা বাশার আল আসাদ কতৃক বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বেশিরভাগ এলাকা সরকার দখল করে নিয়েছে।  কিন্তু সর্বশেষ ২০২০ সালে সরকার নতুন করে ইদলিব অভিযানে গিয়ে একটি নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে। রাশিয়ান বিমান হামলায় তুরস্কের ৩৩ জন সৈন্য নিহত হওয়ার পর তুরস্ক সরাসরি সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর উপর ব্যাপক হামলা শুরু করে। মাত্র এক সপ্তাহে তুরস্কের ড্রোন হামলায় প্রায় ৩ হাজার সৈন্য ও ১৫০টি ট্যাংক, ৩টি যুদ্ধ বিমান, ৮টি হেলিকপ্টার, ২ এন্টি এয়ারক্রাফ্ট মিসাইল সিস্টেম সহ অসংখ্য সামরিক যান ক্ষতি হয়। তুরস্ক চাচ্ছিল সিরিয়ান সরাসরি বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধে যেতে, কিন্তু তাদের উচিৎ ছিল আরো আগে থেকেই ন্যাটোর সাথে একটা সমাঝোতায় যাওয়া এবং আমেরিকার সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে মার্কিন পেট্রিয়ট মিসাইল সিস্টেম ইদলিবের আশে পাশে মোতায়েন রাখা।

যাই হোক, তুরস্ক দেরিতে হলেও বুঝতে পেরেছে সিরিয়ার আজ হোক আর কাল হোক বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়াতে হবেই। তাই M4 ও M5 রোড রাশিয়াকে ছেড়ে দিয়েই যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এবং রাশিয়াকে এটাও সাফ জানিয়ে দিয়েছে পরবর্তীতে যদি আবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন হয় তাহলে তারা আগের সীমানায় ফিরে যাবে, অর্থাৎ সর্বাত্মক যুদ্ধে যাবে। তাই আপাতত দৃষ্টিতে মনে হবে সর্বশেষ ইদলিব অভিযানে বাশার আল আসাদ বিজয় হয়েছে, কিন্তু পরবর্তীতে এটাই তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে। একই সাথে পরবর্তীতে যুদ্ধে যাওয়ার পূর্বে আমেরিকা ও ন্যাটোর সাথে তুরস্ক একটি সমাঝোতার সুযোগ পেয়েছে।

আর তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যে সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি চুক্তি যে বেশিদিন স্থায়ী হবে না, এটা সবাই জানে। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও মনে করে এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি বেশিদিন টিকবে না। যুক্তরাষ্ট্রের সিরিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত জেমস জাফরি ও তুরস্কে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড সেটারফিল্ড সর্বশেষ ব্রাসেলস বৈঠকে বলেছেন "যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর উচিত ইদলিব ইস্যুতে তুরস্ককে যথাসম্ভব সহযোগিতা প্রদান করা, যেখানে রাশিয়া তাদের মিত্র বাশার আল আসাদকে রক্ষার জন্য এয়ার সাপোর্ট ও সৈন্য দিয়ে সহযোগিতা করছে, সেখানে আমরা আমাদের ন্যাটো জোটের সদস্যকে রক্ষার জন্য পেট্রিয়ট মোতায়েন করা অবশ্যই দরকার"। এবং তারা এটাও বলেছে রাশিয়ার উচিত আমাদের ওয়ারর্নিং মাথায় রাখা। বিস্তারিত জানতে লিংকঃ https://www.aljazeera.com/amp/news/2020/03/offering-patriot-system-russian-400s-operated-turkey-200310164130457.html

তাই পরবর্তী সিরিয়া ও তুরস্কের সংঘর্ষ হবে ন্যাটো বনাম রাশিয়া যুদ্ধ। এবং খুব শীঘ্রই আমরা বাশার আল আসাদের ভয়াবহ পরিণতি দেখতে পাব ইনশাআল্লাহ। এবং কিতাবুল ফিতানের ৮৩৩নং হাদীসে এর সরাসরি বর্ননা রয়েছে।

** হযরত আরতাত (রহঃ) থেকে বর্নিত, তিনি এরশাদ করেন, যখন তুর্কী (তুরস্ক), রোম (আমরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি) এবং খাসাফ জাতি (রাশিয়া) দামেস্কের এক প্রান্তরে জমায়েত হবে এবং দামেস্কের মসজিদের পশ্চিম প্রান্তে আরেকদল ভুপাতিত হবে তখনই শাম দেশে আবকা, আসহাফ এবং সুফিয়ানীদের তিনটি ঝান্ডা প্রকাশ পাবে। দামেস্ক এলাকাকে জনৈক লোক (বাশার আল আসাদ) অবরুদ্ধ করে রাখবে। এক পর্যায়ে সেই লোক (বাশার আল আসাদ) এবং তার সাথীদেরকে হত্যা করা হলে, বনু সুফিয়ান থেকে আরো দুইজন লোকের আত্ন প্রকাশ হবে। তখন যেন (শিয়াদের জন্য) দ্বিতীয় বিজয় পাওয়া গেল।অতঃপর যখন আবকা গোত্রের লোকজন মিশর থেকে এগিয়ে আসবে তখনই সুফিয়ানী তার সৈন্যদের সাহায্যে তাদের সামনে আত্নপ্রকাশ করবে। রোম (আমরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি) এবং তুর্কীরা (তুরস্ক) মিলে কারকায়সিয়া (দেইর আজ জুর) নামক স্থানে তাদেরকে হত্যা করবে এবং তাদের গোশত দ্বারা জঙ্গলে বাঘ-ভল্লুকরা তৃপ্ত হবে।

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৮৩৩ ]


⚫ মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে মুহাম্মদ বিন জায়েদের ভূমিকাঃ

মুহাম্মদ বিন জায়েদ মূলত ইখওয়ানুল মুসলিমীন ও ইরানকে তার প্রধান শত্রু মনে করে। কারন আরব বসন্তের পর তিনি স্পষ্টই বুঝতে পেরেছেন আরব রাজা বাদশাহদের পতনের পর ইখওয়ানুল মুসলিমীন বেশিরভাগ দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় চলে আসছে। যেমন তিউনিশিয়ার প্রেসিডেন্ট বেন আলী ও হোসনি মোবারকের পতনের পর সেখানে ক্ষমতায় আসে ইখওয়ানুল মুসলিমীন, আর লিবিয়াতে গাদ্দাফির পতনের পর ত্রিপোলির নিয়ন্ত্রিত আসে ইখওয়ানুল মুসলিমীনের অনুসারীদের হাতে। আর ইরান সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর ইরাকের ক্ষমতায় আসে শিয়া নুরি আল মালিকির সরকার, সিরিয়াতে আগে থেকেই তাদের মিত্র বাশার আল আসাদ ক্ষমতায় ছিল, ২০১২ সাল থেকে সিরিয়াতে বাশার আল আসাদকে রক্ষার জন্য শিয়া মিলিশিয়াদের পাঠানো শুরু করে ইরান, এছাড়াও লেবাননে আগে থেকেই তাদের আরেক সহযোগী হিজবুল্লাহর ভালো একটা প্রভাব ছিল। ২০১৫ সালে ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীরা রাজধানী সানা দখল করে নেয়। অর্থাৎ ইরাক, সিরিয়া, লেবানন ও ইয়েমেনের নিয়ন্ত্রন চলে যায় ইরানের হাতে। তার পরেই নরে চরে বসে আরব দেশগুলোর রাজা বাদশাহরা, তাৎক্ষণিকভাবে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যায় মুহাম্মদ বিন সালমান, ২০১৭ সালে মুহাম্মদ বিন জায়েদ ইয়েমেন যুদ্ধে জড়িয়ে পরে। ২০১৯ সালে আলজেরিয়া ও সুদানের প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করার পেছনে কলকাঠি নাড়ে মুহাম্মদ বিন জায়েদ। আর কাতারের উপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের পরিকল্পনা আসে মুহাম্মদ বিন জায়েদের মাথা থেকে। এছাড়াও ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে লিবিয়ার ত্রিপোলি দখলের জন্য বেনগাজি নিয়ন্ত্রনকারী খলিফা হাতফারকে ফান্ডিং করে MBS ও MBZ ।
২০১৯ সালে এসে তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে কাতার, সুদান, ও লিবিয়াতে আবির্ভূত হয় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান। কেননা ২০১৬ সালে এরদোয়ানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ব্যার্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পেছনে কলকাঠি নাড়ে মুহাম্মদ বিন জায়েদ। MBZ ও MBS এর কাতারের উপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের পর ইরান ও তুরস্ক মিলে একপ্রকার অকার্যকর করে দেয়। ইয়েমেনে এখন পর্যন্ত ১০০ বিলিয়ন ডলার খরচ করেও রাজধানী সানা পূনঃদখল করতে পারেনি। সিরিয়াতে আরবদের সব ইনভেস্টমেন্ট মাটি করে দেয় ইরান ও রাশিয়া। সর্বশেষ লিবিয়াতেও এখন পর্যন্ত এক বছর অতিবাহিত হলেও ত্রিপোলির নিয়ন্ত্রিত নিতে ব্যার্থ হয় খলিফা হাতফার। অর্থাৎ মুহাম্মদ বিন জায়েদ শত্রু হিসেবে আরো একজনের আবির্ভাব হয়, তিনি হলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান।


⚫ সিরিয়া নিয়ে মুহাম্মদ বিন জায়েদের নতুন কুটনীতিঃ

মুহাম্মদ বিন জায়েদ আরব দেশগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে দামেস্কে পূনরায় তাদের দূতাবাস খুলে দেয়। তুরস্ক , কাতার ও ইসলামিস্ট মিলিশিয়া যেমনঃ মুসলিম ব্রাদারহুড, আহরার আল শাম, তাহরির আল শাম, এদেরকে প্রতিরোধ করার জন্য মুহাম্মদ বিন জায়েদ তার কৌশলগত সহযোগী হিসেবে বাশার আল আসাদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য নজর দেয়। এছাড়াও তুরস্ককে মোকাবেলার জন্য সে উত্তর সিরিয়ার কুর্দিদের সাথেও হাত মিলিয়েছে। কুর্দি মিলিশিয়া PYD কে মুহাম্মদ বিন জায়েদ অর্থায়ন করেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে সে বাশার আল আসাদকে প্রস্তাব দিয়েছে যদি ইদলিবে পূনরায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ইদলিব দখল করে তাহলে দামেস্ককে ৩ বিলিয়ন ডলার অর্থসহায়তা প্রদান করবে। MBZ বলেছেন ইদলিব অভিযানের পূর্বেই ১ বিলিয়ন ডলার অর্থসহায়তা প্রদান করতে রাজি আছেন, যদি সে অভিযান পূনরায় শুরু করে। কিন্তু এর আগেই রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ দামেস্কে এসে বাশার আল আসাদকে বলেছেন তিনি যেন ইদলিবে আর যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন না করেন। এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে ইরান ও রাশিয়া সিরিয়াতে নতুন করে অর্থায়ন করা বন্ধ করে দিয়েছে।
অর্থাৎ তুরস্কের সাথে লিবিয়ার বাইরে আরেকটি প্রক্সি যুদ্ধে যাওয়ার জন্য সে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
এছাড়াও করোনা ভাইরাস শুরু হওয়ার পর করোনা প্রতিরোধের জন্য সিরিয়াকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। বিস্তারিত জানতে লিংকঃ https://twitter.com/ragipsoylu/status/1247890812668530690?s=19
তাই হয়তো খুব শীঘ্রই আমরা দেখতে পাব দুই খুনি বাশার আল আসাদ ও মুহাম্মদ বিন জায়েদ ইদলিবে পূনরায় সাধারণ মুসলমানদের নিয়ে ভয়ানক হোলি খেলায় মেতে উঠবে। কিন্তু এবার বাশার আল আসাদ আর ভাগ্যের সহায়তায় পাবেন না, আমরা হাদিস থেকে জানতে পারি সিরিয়ার বর্তমান অবস্থা খুব শীঘ্রই পরিবর্তন হবে এবং বাশার আল আসাদের কবর রচিত হবে। সেটা কিভাবে হবে, সামনের দিনগুলোতে ইনশাআল্লাহ আমরা দেখতে পাব।

⚫ শেষ কথাঃ

** হযরত কা’ব (রহঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, পৃথিবীর মূল বা, মাথা হচ্ছে শাম দেশে(সিরিয়া) , তার উভয় ডানা হচ্ছে, মিশর এবং ইরাকে এবং লেজ হচ্ছে, হেজাজ (সৌদি আরব, কাতার বাহরাইন, আরব আমিরাত) ভুমিতে। আর সেই লেজের উপর বাজ পাখিরা মলত্যাগ করবে (সিরিয়ার কারনে সর্বশেষ সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত আক্রান্ত হবে)।

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৬৬৭ ]

** হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, চতূর্থ ফিৎনা হচ্ছে, অন্ধকার অন্ধত্বপূর্ন ফিৎনা, যা সমুদ্রের ঢেউয়ের ন্যায় উত্তাল হয়ে আসবে, আরব অনারবের কোনো ঘর বাকি থাকবেনা, প্রত্যেক ঘরেই উক্ত ফিৎনা প্রবেশ করবে। যা দ্বারা তারা লাঞ্ছিত অপদস্ত হয়ে যাবে। যে ফিৎনাটি শাম দেশে (সিরিয়া) চক্কর দিতে থাকলেও রাত্রিযাপন করবে ইরাকে। তার হাত পা দ্বারা আরব ভুখন্ডের (সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত) ভিতরে বিচরন করতে থাকবে। (শুধুমাত্র প্রথম অংশ উল্লেখ করা হয়েছে)

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৬৭৬ ]

এই দুটি হাদীস থেকে বুঝতে পারলাম, সিরিয়ার ফিতনা একপর্যায়ে ইরাক ও জাজিরাতুল আরবে হানা দিবে। বর্তমানে MBS ও MBZ এর কার্যক্রমে তা বুঝতে কারো অসুবিধা হয় না। আর এখন পর্যন্ত মুহাম্মদ বিন জায়েদ যেখানেই হাত দিয়েছেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যার্থ হয়েছেন, সেটা আমরা ইয়েমেন, তুরস্ক, কাতার, লিবিয়াতেও দেখেছি। হয়তো খুব শীঘ্রই তার আরো একটি ব্যার্থ প্রজেক্ট দেখার অপেক্ষায় রইলাম ইনশাআল্লাহ।


Popular posts from this blog

ইমাম মাহদী কোথায় জন্মগ্রহণ করবেন? আমরা তাকে কোন দলে খুঁজে বের করব?

ইমাম মাহদীর আবির্ভাব হবে ২০২৮ সালে (ইনশাল্লাহ)

ফোরাত নদীর তীরে সোনার পাহাড় কোথায় এবং কবে ভেসে উঠবে? (২০২৩ সালে ইনশাল্লাহ)