ইসলামিক ইস্টেট (ISIS) কি আসহাব জাতি? তাদের কি পুনরায় উত্থান হবে? তাদের শেষ পরিণতি কি হবে?


সিরিয়া যুদ্ধের পর থেকেই ইসলামিক ইস্টেট(ISIS) একটি বিতর্কিত নাম। মিডিয়ার মাধ্যমে পৃথিবীর প্রায় বেশিরভাগ মানুষ এই দলটির নাম শুনেছে কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এই দলটিকে শত্রু মনে করে থাকে। তাদের মনে ধারনা হচ্ছে, ইসলামিক ইস্টেট মানেই শিরশ্ছেদ করা, আত্মঘাতী বোমা হামলা করা, নারীদের ধর্ষণ করা, আর মিডিয়ার হেডলাইনে থাকা। এমনকি বেশিরভাগ মডারেটপন্থী মুসলমান মনে করে ইসলামিক ইস্টেট হচ্ছে আমরিকা এবং ঈসরাইলের তৈরি একটি দল, এবং তারা ইহুদীদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। যদিও তাদের কাছে এব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য প্রমাণ নেই। তাই আসুন হাদীসের আলোকে জানি, ইসলামিক ইস্টেট আসলে কে? কি হবে তাদের চূড়ান্ত পরিনতি? তারা কি আসলেই আমরিকা ও ঈসরাইলের তৈরি?নাকি অন্য কিছু?

⚫ ইসলামিক ইস্টেট সম্পর্কে হাদিসের আশ্চর্য্য কিছু  বর্ননাঃ
____________________________________________________

** হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুরাইর আল-গাফিকী (রহঃ) বলেন, আমি হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, ‘স্বর্ণ খনিতে যেমনিভাবে স্বর্ণ বাছাই করা হয় অচিরে এমন ফিত্বনা হবে যে তাতে মানুষকে তেমনিভাবে বাছাই করা হবে। সুতরাং তোমরা শামবাসীকে গালি দিও না বরং তাদের মধ্য হতে যারা যালেম তাদেরকে দোষারোপ করো। কেননা তাদের মাঝে রয়েছে আব্দাল তথা; আল্লাহর প্রিয় বান্দারা। আর অচিরেই আল্লাহ তাআ’লা তাদের উপর আসমান থেকে এমন সূখ-সাচ্ছন্দ প্রেরণ করবেন যে তাতে তিনি তাদেরকে ডুবিয়ে দিবেন, এমনকি অবস্থা এমন হবে যে, তাদের সাথে যদি শিয়ালেও লড়াই করে তাহলে শিয়ালও তাদের উপর জয়লাভ করবে। আতঃপর আল্লাহ তাআ’লা সেই সময়ে রাসূল (সঃ) এর পরিবার থেকে এক ব্যক্তিকে প্রেরন করবেন, (এমনই এক দল নিয়ে) যারা সংখ্যায় হবে কম করে বারো হাজার আর বেশী হলে সংখ্যায় তারা হবে পনের হাজার। তাদের আলামত অথবা লক্ষণ হবে “মৃত্যু বরণ করাও, মৃত্যু বরণ করাও”। তিন পতাকায়। তাদের বিরূদ্ধে লড়াই করবে সাত পতাকা-ধারীরা। প্রত্যাক পতাকাধারীই সাম্রাজের/দূনিয়ার জন্য লালায়িত হবে এবং তারা লড়াইয়ে লিপ্ত হয়ে পরাজিত হবে। অতঃপর হাশেমীর আত্মপ্রকাশ ঘটবে। তখন আল্লাহ তাআ’লা মানুষের নিকটে পারস্পারিক সৌহার্দ্য ভালোবাসা ও নিয়ামত ফিরিয়ে দিবেন। অতঃপর তাদের এ অবস্থা থাকতেই দাজ্জালের উদয় ঘটবে"। 

(মুসতাদরাক হাকেম, হাদিস নং-৮৬৫৮, ইমাম হাকেম রহঃ এবং ইমাম যাহাবী রহঃ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)

** হযরত উসমান ইবনে আবু শায়বা (রহঃ) হযরত আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন, একদা আমরা যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিকটে বসা ছিলাম, তখন বনু হাশেম (অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাঃ এর নিজের) গোত্রের কতিপয় যুবক এসে উপস্থিত হল। যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাদেরকে দেখলেন, তখন তার চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে গেল এবং তার চেহারার রং পাল্টে গেল। হাদিস বর্ননাকারী রাবী রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বললেন, আমরা আপনার চেহারায় সব সময় দুশ্চিন্তার ছাপ দেখতে পাই। তখন তিনি বললেন, আমরা সেই পরিবারের লোক, যাদের জন্য আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার পরিবর্তে আখিরাতকে নির্বাচন করেছেন। আমার পরিবার পরিজন আমার (মৃত্যুর) পরে অচিরেই কঠিন বিপদ আপদের সম্মুখীন হবে, দেশান্তরে বাধ্য হবে। এমনকি তাদের সাহায্যে প্রাচ্য (খোরাসান) থেকে কালো পতাকাবাহী একদল লোক এগিয়ে আসবে। তারা কল্যাণ (খিলাফত) চাইবে কিন্তু তাদেরকে তা দেয়া হবেনা, তখন তারা যুদ্ধ করবে এবং বিজয়ী হবে। একপর্যায়ে তারা যা(খিলাফত) চেয়েছিল, তাদেরকে তা দেয়া হবে কিন্তু তখন তারা তা গ্রহণ করবে না। অবশেষে তারা আমার পরিবারের একজনের (মাহদীর) নিকট তা (খিলাফত) সোপর্দ করবে। সে পৃথিবীকে ন্যায় বিচারে পরিপূর্ণ করে দিবে, যেমনিভাবে এর পূর্বে এটি অন্যায় ও জুলুম দ্বারা পরিপূর্ণ ছিল। তোমাদের মধ্যে যারা সেই যুগ পাবে, তারা যেন তাদের নিকট যায়। যদিও বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে যেতে হয়।
(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং - ৪০৮২)

⚫ইসলামিক ইস্টেটের (ISIS) এর বর্তমান খলিফা আবু বকর আল বাগদাদী তিনি মূলত কুরাইশ বংশের বনু হাশেম গোত্রের হযরত হোসাইন (রাঃ) এর বংশধর। এছাড়াও প্রাক্তন আমির আবু উমর আল বাগদাদী তিনিও কুরাইশ বংশের ছিলেন।

** হযরত জাফর সাদিক (রহঃ) থেকে বর্নিত তিনি বলেন, "তখন কেমন হবে? যখন ইমাম মাহদীর সহযোগীরা কুফা (মসূল) শহরের মসজিদে নিজেদের ঘাটি স্থাপন করবে? তারপর তিনি (মাহদী) নতুন ভাবে নতুন শাসক রূপে আবির্ভূত হবেন। তিনি আরবদের প্রতি কঠোর হবেন"।

(কিতাবুল গাইবাত, অধ্যায় নং-২১, হাদিস নং-৬, পৃষ্ঠা নং - ৪৭০, মুজ'য়াম আল হাদীস আল ইমাম আল মাহদী, খন্ড - ৪,পৃষ্ঠা নং-৪৭, বিশারাতুল ইসলাম, পৃষ্ঠা ২২৩)

ইসলামিক ইস্টেট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার পূর্বে বলে রাখি, হাদিসে বর্ণিত কুফা নগরী সম্পর্কিত সকল হাদিসগুলো সতর্কতার সাথে মসূল শহরের সাথে মিলিয়ে দেখতে হবে। এব্যাপারে হাদীসের আলোকে ইতোমধ্যেই বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। লিংকঃ https://plus.google.com/101401526729996672060/posts/X4h3UhevPRX

২০১৪ সালে রমজান মাসে ইসলামিক ইস্টেট যখন প্রথম খিলাফত ঘোষণা করে, তখন প্রথমবারের মত তাদের খলিফা আবু বকর আল বাগদাদী ইরাকের মসূল শহরের ঐতিহাসিক আন নুর মসজিদে প্রকাশ্যে আসেন এবং জুমার নামাজের খুৎবা (ভাষন) প্রদান করেন। তখন থেকে ইসলামিক ইস্টেট এর অনুসারীরা মসূল শহরের এই তাদের ঘাটি হিসেবে ব্যবহার করে। এছাড়াও ইসলামিক ইস্টেট থেকে American lead coalition নেতৃত্বাধীন বাহিনী যখন মসূল পূনর্দখলের যুদ্ধের সময়ে তারা এটিকে ইসলামিক ইস্টেট এর ঘাটি মনে করে এই মসজিদটির উপর বোমা হামলা চালিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছিল। এক কথায় বলা চলে, ইসলামিক ইস্টেট এর উত্থান হয়েছে এই মসূল শহর বিজয় এবং আন নুর মসজিদে জুমার নামাজে আবু বকর আল বাগদাদীর ভাষণের মাধ্যমে।

** হযরত আবু বসির (রহঃ) হযরত জাফর সাদিক (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, "কখন তিনি (ইমাম মাহদী) আবির্ভূত হবেন? উত্তরে তিনি বললেন, যখন তুমি ইরাকের আনবার, ফোরাত নদীর উপকূল, দাজলা নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকা, সিরাজ (ইরানের একটি শহর) থেকে সৈন্য বাহিনীকে আসতে দেখবে। এবং কুফা (মসূল) শহরের (আন নুর মসজিদের) মিনার ধ্বংস হতে দেখবে, এবং কুফা (মসূল) শহরের কিছু বাড়ি ঘর আগুনে জ্বলতে দেখবে। তখনই আল্লাহ তায়ালা তার ইচ্ছা অনুযায়ী (বিশেষ) কিছু ঘটাবেন। অর্থাৎ তখনই সত্যিকার অর্থে ইমাম মাহদীর আবির্ভাব হবে"। কেউ আল্লাহর নির্দেশকে আটকাতে পারবে না, কেউ আল্লাহর বিচারের উপর হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।

(ফালাইস সায়েল, পৃষ্ঠা - ১৯৯, আল মিসবাহ, পৃষ্ঠা - ৫১, আল বালাদুল আমিন, পৃষ্ঠা - ৩৫)

** হযরত আবু কুবাইল (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন বনী হাশেমের এক ব্যক্তি বাদশা হবে। অতপর সে বনী উমাইয়াকে হত্যা করবে। এমনকি তাদের মাঝে দূর্বল ব্যতীত কেউ জীবিত থাকবে না। তাদের ব্যতীত অন্য কাউকে সে হত্যা করবে না। অতপর বনী উমাইয়া হতে এক ব্যক্তি বের হবে। সে প্রত্যেক এক ব্যক্তির পরিবর্তে দুই জনকে হত্যা করবে। এমনকি বনী হাশেমের মহিলা ব্যতীত কেউ জীবিত থাকবে না। অতপর মাহদী বের হবে।

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৯৬৮ ]

ইসলামিক ইস্টেট এর খলিফা আবু বকর আল বাগদাদী, তিনি হচ্ছেন কুরাইশ বংশের বনু হাশেম গোত্রের লোক। তাই যদি হাদীসে বনি হাশেম বলা হয়ে থাকে, বুঝতে হবে ইসলামিক ইস্টেট এর কথাই বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ আসহাব জাতি (Islamic state) রাজত্ব পাওয়ার পর পরই তারা বনি উমাইয়া বংশের একজনকে হত্যা করবে। ভবিষ্যতে দ্বিতীয় সুফিয়ানী হয়ে যে আত্নপ্রকাশ করবে, সে কিন্তু সরাসরি বনি উমাইয়া বংশের আবু সুফিয়ানের বংশধর থেকে হবে। আর তার সহযোগী হবে বানু কাল্ব গোত্রের লোকজন অর্থাৎ বর্তমানে যারা বাশার আল আসাদকে সমর্থন করে যুদ্ধ করছে, তারাই প্রথম সুফিয়ানী ও দ্বিতীয় সুফিয়ানীর পক্ষেই যুদ্ধ করবে। 

অর্থাৎ সহজ ভাষায়, ইসলামিক ইস্টেট রাজত্ব পাওয়ার সাথে সাথেই বাশার আল আসাদের সমর্থন কারী শিয়া মিলিশিয়া,কাল্বী/আলাবী, হিজবুল্লাহ, SAA, IRGC রাশিয়ান সৈন্যকে হত্যা করবে। এমনকি একসময় দূর্বল সাধারণ লোক ব্যাতিত তাদের পক্ষে যুদ্ধ করার মত কোন লোকই থাকবে না। এরপর পুনরায় বনি উমাইয়া বংশের (সুফিয়ানী) আত্নপ্রকাশ করবে এবং প্রতি ১ জনের বিপরীতে দুইজন হত্যা করবে। এমনকি আসহাব জাতির (Islamic state) মহিলা ব্যতীত কোন পুরুষ লোকই বেচেঁ থাকবে না। সবাইকে সুফিয়ানী হত্যা করে ফেলবে।

⚫কালো পতাকাবাহী আসবাব জাতি (Islamic state) ও হায়াতা তাহরির আল শাম(HTS) এর মধ্যকার ফিৎনা সম্পর্কে হাদিসঃ
____________________________________________________

** হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি এরশাদ করেন, শাম দেশে ফিৎনা এত বেশি, তীব্র আকার ধারন করবে যা দ্বারা সমাজের সম্মানী লোকজন প্রথমে বিজয়ী হবে। অবশ্যই সেটা খুবই অল্প সময়ের জন্য থাকবে। অতঃপর নিম্ন শ্রেনীর লোকজন জয়লাভ করতে থাকবে। যাদের জ্ঞান বুদ্ধি হবে খুবই কম। তারা সম্মানী লোকদেরকে কৃতদাস বানিয়ে রাখবে যেমন পূর্ববর্তী যুগের লোকজন গোলাম বানিয়ে রাখতো।

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৬৭৯ ]

আমরা দেখেছি, সিরিয়া যুদ্ধের প্রথমদিকে ২০১২ /১৩ সালে খুব দ্রুতই (Islamic state of Iraq - ISI) এবং জাবাহাত আল নুসরা (বর্তমান HTS) যারা আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করতে চায়। তারা অল্প দিনেই দেইর আজ জুর, রাক্কা, আলেপ্পো, ইদলিব, দারা, দামেস্ক এর পূর্বাঞ্চল সহ সিরিয়ার বেশিরভাগ এলাকাই দখলে নিতে সক্ষম হয়। কিন্তু ২০১৬ সালের শুরু থেকেই তারা একে একে আলেপ্পো, পালমিরা, দারা, রাক্কা, দেইর আজ জুর হাতছাড়া হয়ে যায়। বর্তমানে কেবল ইদলিব ছাড়া সিরিয়ার বেশিরভাগ এলাকাই শিয়া পন্থী সিরিয়ার সরকারি বাহিনী এবং কুর্দি বাহিনীর দখলে রয়েছে। এবং এই পূনর্দখল কৃত এলাকা গুলোতে সুন্নি পন্থী বিদ্রোহী এবং ইসলামিক ইস্টেট এর অনুসারীদের উপর হত্যা, বন্দি, নির্যাতন সহ অনেকটাই কৃতদাসের মতই আচরন করছে।

** বিশিষ্ট সাহাবী হযরত সুবান (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, কিছু দিনের মধ্যে এমন এক খলীফা আত্নপ্রকাশ করবে, লোকজন যার হাতে বাইয়াত গ্রহনে অস্বীকৃতি জানাবে এবং তার নায়েব (সহযোগী) তার দুশমন হয়ে যাবে। যার কারনে একাকী সফর করা বিহীন তার আর কোনো উপায় থাকবেনা এভাবে চলতে চলতে এক সময় তারা দুশমনের (শত্রুর) উপর বিজয়ী হবে। ইরাক বাসিরা তাকে ইবায় ফিরিয়ে নিতে চাইলে সে অস্বীকতি জানাবে এবং বলবে এটা হচ্ছে, যুদ্ধের জন্য উপযুক্ত স্থান, যার কারনে তারা তাকে ছেড়ে চলে যাবে। তাদের মধ্য থেকে একজনকে নেতা নিযুক্ত করবে, সকলে তার কাছে যাবে এবং হিমস নগরীর হানাসিরা পাহাড়ে তার স্বাক্ষাৎ পাবে। শাম বাসিদের কাছে এসংবাদ পাঠানো হলে তারা একজনের সান্নিধ্যে জমায়েত হবে, তাদের সাথে ভয়াবহ একটি লড়াই হবে। এমন কি একলোক তার বাহনের উপর দাড়াতে চাইলে সে গণনা করতে পারবে।

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৮৭২]

ইসলামিক ইস্টেট খিলাফত ঘোষণার পূর্বে জাবাহাত আল নুসরা (বর্তমান HTS) সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শিয়া নুসাইরি, কাল্বী, হিজবুল্লাহ, ইরান ও বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করেছিল, তখন তারা খুব দ্রুতই সাফল্য পাচ্ছিল। কিন্তু ২০১৪ সালে ইসলামিক ইস্টেট যখনই খিলাফত ঘোষণা করল, তখন সিরিয়ার কোন জিহাদী গ্রুপ তাদেরকে বাইয়াত তো দেয়নি। বরং জাবাহাত আল নুসরা (বর্তমান HTS) এর কমান্ডার আবু মুহাম্মদ জুলানী (হাফিঃ) তাদের শত্রু হয়ে গেল।যে কিনা ২০১৪ সালের পূর্বে তাদের বিশ্বস্ত সহযোগী ছিল। তখন একাকী পথ চলা ছাড়া তাদের আর কোন উপায় রইলনা। হাদিসের শেষ অংশটি অন্য হাদীসের সাথে আলোচনা করা হবে।

** হযরত ইয়াকুব ইবনে ইসহাক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন একজন লোক যে ফিতানের আলামত হবে। তিনি বলেন সে রিক্কায়(রাক্কা) অবস্থান নিবে। আর সে হবে আব্বাসীয় বংশভূত একজন লোক। অতপর সে সেখান দুই বছর অবস্থান করবে। অতপর সে রোমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। অতপর সে রোমের উপর যতটনা বিপদের কারণ হবে তার বেশী বিপদের কারণ হবে মুসলমানদের জন্য । অতপর সে যুদ্ধ হতে রিক্কাতে রাক্কাতে ফিরে আসবে। অতপর তার নিকট পূর্বাঞ্চল (ইরাক) হতে যা সে অপছন্দ করে তা তার নিকট আসবে। অতপর সে পাশ্চাত্যে  ফিরে যাবে। কিন্তু সে সেখান থেকে ফিরে আসবে না। অতপর বনি আব্বাসের আরেক জন তার স্থলাভিষিক্ত হবে। আর তার মাথার উপরেই সুফইয়ানির অর্বিভাব হবে। এবং তার রাজত্ব কাটা পড়বে। (অর্থাত তার আমলেই সুফিয়ানী বের হবে) এবং তার মাধমেই তাদের রাজত্ব শেষ হবে।

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৮৭৬ ]

সুবহানাল্লাহ! কত সুন্দর করে ইসলামিক ইস্টেট কে নিয়ে এই হাদিসে ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছে, ইসলামিক ইস্টেট এর প্রধান আবু বকর আল বাগদাদী কিন্তু কুরাইশ বংশের বনু হাশেম গোত্রের লোক। আর আব্বাসীয় বংশ হল কুরাইশ বংশের বনু হাশেমের একটি শাখা। অর্থাৎ বর্তমান সময়ের সাথে সামঞ্জস্য পূর্ণ কোন হাদিসে বনু হাশেম বা, বনু আব্বাস বুঝানো হলে আমরা সতর্কতার সাথে ইসলামিক ইস্টেট এর সাথে মিলিয়ে দেখব। ২০১৪ সালে ইসলামিক ইস্টেট ইরাক ও সিরিয়াতে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় খিলাফত ঘোষণা করে। তার পরপরই আমরিকা, ফ্রান্স, রাশিয়ার বিমান হামলা, মিসাইল নিক্ষেপ, স্থল অভিযানের মুখে পরতে হয়। তারপর একে একে ইরাকের রামাদি, ফাল্লুজা, তিরকিত, কিরকুক, মসুল, আনবার, হাওয়াজি,সিরিয়ার পালমিরা, উত্তর আলেপ্পো, রাক্কা, দেইর আজ জুর, মাদায়েন শহর ২/৩ বছরের মধ্যেই হাত ছাড়া হয়ে যায়। শুধুমাত্র রাক্কা শহরেই আমরিকান বিমান বাহিনী ২০,০০০টি বোমা হামলা চালিয়েছে। আর মসুল শহরে তো তার চেয়েও বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে আমরিকান বিমান বাহিনী ও ইরাকী বিমান বাহিনী। ইসলামিক ইস্টেট থেকে মসূল উদ্ধার করার জন্য ইরাকী সৈন্য বাহিনী, শিয়া মিলিশিয়া, PMU, কুর্দি বাহিনী সহ সর্বমোট ১,২৫,০০০ যোদ্ধা মাত্র ৫/৬ হাজার আই এস যোদ্ধার বিরুদ্ধে ৯ মাস যুদ্ধ করতে হয়েছে। মসূল যুদ্ধে ইরাকী সৈন্য বাহিনীর ২১০০০ যোদ্ধা নিহত হয়েছে, এবং ৫০% এর বেশি সামরিক যান, ট্যাংক, হামাবী, আর্টিলারি, ধ্বংস হয়েছে। এছাড়াও মসূল যুদ্ধে সাধারণ মানুষ সহ সর্বমোট ৪০,০০০ লোক নিহত হয়েছে। ইসলামিক ইস্টেট এই যুদ্ধে ৪০০ আত্মঘাতী/ইশতিহাদি হামলা চালিয়েছে, যা আধুনিক যুগের যুদ্ধের অন্যতম একটি ঘটনা। এছাড়া রামাদি, ফাল্লুজা, তিরকিত, দেইর আজ জুর, পালমিরা, উত্তর আলেপ্পোতে আমরিকান বিমান বাহিনী, রাশিয়ান বিমান বাহিনী কয়েক হাজার বার বিমান হামলা চালিয়েছে। এছাড়াও ক্রুজ মিজাইল, সহ প্রায় ২০০ প্রকার অস্ত্র দিয়ে ইসলামিক ইস্টেট এর বিরুদ্ধে হামলা চালিয়েছে।

তারপর হাদীসের শেষ অংশে বলা হয়েছে, তার নিকট পরবর্তীতে পূর্বাঞ্চল (ইরাক) থেকে যা, সে অপছন্দ করবে তা আসবে। অন্যান্য হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি, অচিরেই ইরাকের মানুষেরা কালো পতাকাবাহী দলের (Islamic state) হয়ে বাগদাদ, মসূল সিরিয়ার হোমস শহর দখল করবে এবং তাকে ইরাকে ফিরিয়ে নিতে চাইবে। কিন্তু সে তাদের কে ফিরিয়ে দিবে, এবং বলবে এই সিরিয়া হচ্ছে নবী রাসূলগনের পবিত্র ভুমি, এটাই যুদ্ধের জন্য উপযুক্ত স্থান। একপর্যায়ে সিরিয়ার হোমস শহরে তার বিরুদ্ধে ইরাকের কালো পতাকাবাহী দল (অর্থাৎ ইরাকের Islamic state এর লোকেরা তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। তার পর বলা হয়েছে, তার পরবর্তীতে আরেকজন খলিফা স্থলাভিষিক্ত হবেন, এবং তার সময়েই সুফিয়ানীর উত্থান হবে।

** হযরত ইবনে যুরাইর (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকজন চারজন জালেমের ক্ষেত্রে মতপার্থক্য হয়ে যাবে। একজন হবে প্রতাপশালী (Islamic state) , যে নিজের জন্য খেলাফতের বাইয়াত করাবে। লোকজনকে একশত একশত করে দান করতে থাকবে। অন্য দুইজন শাম দেশের বাসিন্দা তারাও মানুষকে এত বেশি দান করবে, যা ইতোমধ্যে কেউ করেনি। তাদের দুই জন থেকে সেই দিমাশকে বিজয়ী হবে, সে লোকই হবে শাম (সিরিয়া) দেশের নেতৃত্ব দানকারী।

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৮৪৩ ]

⚫বর্তমানে আমরা যদি সিরিয়ার দিকে তাকাই, তাহলে চারটি প্রধান গ্রুপকেই দেখতে পাই। যেমনঃ

১,আসহাব জাতি (Islamic state) বা,কালো পতাকাবাহী দল। এরা বর্তমানে ইরাক ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী মরুভূমি এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

২,হায়াতা তাহরির আল শাম (HTS) সহ সকল বিদ্রোহী গ্রুপ। আহরার আল শাম, জাইশুল ইসলাম, হারাকাত নুরুদ্দিন জিংকি, FSA ।এরা বর্তমানে ইদলিব প্রদেশ উত্তর আলেপ্পো, আফরিন নিয়ন্ত্রণ করছে। এদেরকে তুরস্ক, সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, কুয়েত অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছে।

৩,আমরিকান সমর্থন পুষ্ট কুর্দি বাহিনী, PKK, YPG, PYD, SDF ।এরা বর্তমানে রাক্কা, হাসাকা, মানবিজ, কোবনী, তাবকা নিয়ন্ত্রণ করছে।

৪,বাশার আল আসাদের অনুগত SAA, শিয়া নুসাইরি, কাল্বী/আলাবী, হিজবুল্লাহ, ইরানের IRGC, রাশিয়ান সৈন্য বাহিনী। যারা বর্তমানে দেশের বেশিরভাগ এলাকাই পুনঃদখল নিতে সক্ষম হয়েছে।

⚫ইসলামিক ইস্টেট (ISIS) খুব শীঘ্রই ইরাকের বাগদাদ, মসূল ও সিরিয়ার হোমস শহর দখল করবে?
____________________________________________________

যদিও ২০১৬ - ১৭ সালে ইসলামিক ইস্টেট ইরাক ও সিরিয়ার প্রায় সবগুলো শহরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে কিন্তু ইসলামিক ইস্টেট খুব শীঘ্রই ইরাকের রাজধানী বাগদাদ, দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মসূল শহর এবং সিরিয়ার হোমস শহর দখল করবে। মূলত সুফিয়ানী সিরিয়াতে তার রাজত্ব পূনঃপ্রতিষ্ঠা করার পর ইরাকের বাগদাদ এবং কুফা (মসূল) শহরে হামলা করবে এরকম অনেকগুলো হাদীস রয়েছে। এছাড়াও হলুদ পতাকাবাহী বর্বর আবকা জাতি (Tuareg Militant) তারা সুফিয়ানীর উত্থানের পূর্বে সিরিয়ার হোমস শহরে কালো পতাকাবাহী দলকে ১৬ মাস অবরুদ্ধ করে রাখবে এরকম হাদিসও রয়েছে। যেমনঃ

** "দাজলা (Tigress) নদী ও ফোরাত (Euphretise) নদীর মাঝখানে একটা শহর নির্মাণ করা হবে। সেখানে বড় ধরনের একটি যুদ্ধ হবে। নারীদেরকে যুদ্ধবন্দি হিসেবে জেলখানায় আবদ্ধ করা হবে এবং পুরুষদেরকে ভেড়ার মত জবাই করে হত্যা করা হবে"।

(আল মুত্তাকী আল হিন্দিঃ আল বুরহান ফি আলামত আল মাহদী, কানজুল উম্মাল, খণ্ড - ৫,পৃষ্ঠা - ৩৮)

ইসলামিক ইস্টেট (ISIS) সাধারণত কোন শহর বা, এলাকা দখল করলে বিরোধী পক্ষের সেনাবাহিনীর মধ্যে ভয় এবং ফাটল সৃষ্টির জন্য শিরশ্ছেদ করে এটা মোটামুটি সবাই জানে। আর এই হাদিসটিতেও এরকমই বলা হয়েছে যে, বাগদাদ দখল করার পর সেখানকার পুরুষদের ভেড়ার মত জবাই করা হবে। ২০০৩ সালের পর থেকে বর্তমানে বাগদাদে শিয়া শাসক দ্বারা ইরাক শাসিত হয়ে আসছে। হয়তো খুব শীঘ্রই ইরাকের এসব শিয়াদেরকে ইসলামিক ইস্টেটের যোদ্ধারা ভেড়ার মত জবাই করে হত্যা করবে, ইনশাল্লাহ।

** "শেষ জমানায় বাগদাদ আগুনের মাধ্যমে ধ্বংস হবে"।
(রিসালাত আল খুরুজ আল মাহদী, খন্ড - ৩,পৃষ্ঠা - ১৭৭)

যদিও ২০১৭ সালে ইরাক ইসলামিক ইস্টেটের বিরুদ্ধে অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেছে, কিন্তু মাত্র কয়েক মাসের মাথায় তারা ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং পুরোদমে গেরিলা আক্রমণ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে বাগদাদের পার্শ্ববর্তী সালাউদ্দিন, দিয়ালা ও কিরকুক প্রদেশে তারা সফল ভাবে ফিরে এসেছে।এছাড়াও ফাল্লুজা ও রামাদি এলাকাও ইসলামিক ইস্টেট প্রচুর পরিমাণে গোপন সেল তৈরি করছে। সাম্প্রতিক সময়ে কিরকুক-বাগদাদ মহা সড়কে প্রতিদিন গুপ্তহত্যা, অপহরণ ও গেরিলা যুদ্ধের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সামরিক বিশ্লেষকদের ধারনা ইসলামিক ইস্টেট এসব এলাকায় সফল ভাবে অন্তত ২০০০ হাজার যোদ্ধা জড়ো করেছে। এসব পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে খুব শীঘ্রই ইসলামিক ইস্টেট বাগদাদ দখল করবে। লিংকঃ https://www.washingtonpost.com/world/isis-is-making-a-comeback-in-iraq-less-than-a-year-after-baghdad-declared-victory/2018/07/17/9aac54a6-892c-11e8-9d59-dccc2c0cabcf_story.html

আর মসূল শহরের ব্যাপারে ইরাক সরকার আরো বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে পরছে। সাম্প্রতিক সময়ে মসূলের নিকটবর্তী হিজ্জিন শহরের স্থানীয় গোত্র নেতারা অভিযোগ করেছেন, তাদের এলাকায় রাত হলেই নাকি ইসলামিক ইস্টেটের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়, তাই তারা সরকারকে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করতে অনুরোধ করছেন। এছাড়াও মসূলের নিকটবর্তী ইরাক ও সিরিয়ার বর্ডার এলাকায় তারা প্রচুর পরিমাণে গোপন সেল তৈরি করছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, বাগদাদের মত মসূল শহরও খুব শীঘ্রই ইসলামিক ইস্টেট দখল করবে। এছাড়াও সুফিয়ানী ইসলামিক ইস্টেটকে পুরোপুরি ধ্বংস করতে এই মসূল শহরে হামলা চালাবে এবং পুরো শহরটিকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিবে। এমনকি সেখানকার ৭০ হাজার যোদ্ধাকে হত্যা করা হবে।

⚫ভবিষ্যতে আসহাব জাতি (Islamic state) দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যাবেঃ
_____________________________________________________

** হযরত আবু নযর (রহঃ) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন আমার নিকট রাসূল (সাঃ) এর জনৈক সাহাবী (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন ইরাকে জনৈক খলিফা অবস্থান নিবে, যার নিকট সিরিয়াবাসীরা বাইয়াত গ্রহণে অপছন্দ করবে। অতপর যা হবার তাই হবে, তার নিকট এখবর আসবে যে, তার শত্রু তার দিকে আসছে। তখন তার দিকে যাবার কোন পথ পাবে না । অতপর একপর্যায়ে পথ পাবে এবং তার দিকে সিরিয়া দিয়ে গমন করবে। পথিমধ্যে তার সাথে যার সাক্ষাৎ হবে এবং তাকেই হত্যা করে দিবে। অতপর সে ইরাকবাসীদের যারা তাকে সাহায্য করবে তাদের বলবে, এটা আমার দেশ, এটা আমার যমিন, এটাই আমার ভূমি। সুতরাং তোমরা তোমাদের দেশে ফিরে যাও, আমি তোমাদের থেকে অমুক্ষাপেক্ষী হতে চাই। ফলে তারা তাদের দেশে(ইরাকে) ফিরে যাবে, তখন তারা বলবে, আমরাই তাকে খলিফা বানিয়েছি এবং আমরাই তাকে সাহায্য করেছি, এবং আমরাই তাকে ব্যতীতই মানুষদের হত্যা করেছি। তারপরও সে আমাদের দেশ(ইরাক) ছাড়া অন্য দেশ(সিরিয়াকে) গ্রহণ করেছে। চলো আমরা সকলেই একত্র হই, যাতে আমরা তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারি। সুতরাং তোমরা তার দিকে সফর কর এবং এসময় তাদের সাথে তিন লাখ সন্দেহপূর্ণ লোক থাকবে। অতপর তারা তার সাথে হিস(হোমস) নামক এলাকায় মিলিত হবে। আর সেখানে তাদের মাঝে প্রচন্ড যুদ্ধ হবে। এমন যুদ্ধ ইতিপূর্বে আরবদের কেউ দেখেনি এবং একপর্যায়ে তাদের উপর সবর(ধৈর্য) ঢেলে দেওয়া হবে এবং তাদের থেকে সাহায্য উঠিয়ে নেয়া হবে। (যুদ্ধ শেষে) এমনকি একজন ব্যক্তি তাদের মাঝে দাড়াবে এবং যদি সে তাদেরকে গণনা করতে চাইলে (তাদের অবশিষ্ট লোকদের সংখ্যা কম হওয়ার কারণে সে) গণনা করতে পারবে।

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৮৭৪ ]

** হযরত মুহাম্মদ ইবনে হিমইয়ার (রহঃ) তার কতিপয় শাইখ থেকে বর্ননা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন, শাম(সিরিয়া) এবং ইরাক বাসীরা হিমস(সিরিয়ার হোমস শহর) নগরীতে একে অপরের উপর আক্রমন করবে, তখন ইরাক বাসীরা পরাজিত হবে এবং তাদেরকে হত্যা করতে করতে নিজেদের দেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে।

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৮৬৩ ]

** হযরত সালমান ইবনে সামীর আলহানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন অচিরেই কূফাতে (ইরাকের মসূল শহরে) একজন খলীফা অবস্থান নিবে। আর পরাজয়ের ক্ষেত্রে সিরিয়াবাসী একমত হবে। অতপর তাদের মাঝে আগ্রহ হবে। আর তাকে (খলিফাকে) বলা হবে, তোমার জন্য আবশ্যক হল যে, তুমি সিরিয়ার ভূমিতে অবস্থান করবে। কেননা সেটা পবিত্র ভূমি, নবীদের ভূমি, খলীফাদের আবাস ভুমি। তখন তার দিকে ধন সম্পদ টেনে আনবে (জমা করবে)। তার থেকে সৈন্যরা পৃথক হয়ে যাবে। তখন সে তাদের কথা মেনে নিবে। আর যখন সে তাদের কথা মেনে নিবে তখনই আহলে মাশরিক তথা পূবাঞ্চলের অধিবাসীরা (ইরাকীরা) তার উপর বদলা নিবে(যুদ্ধ করবে)। তখন তারা বলবে আমরা তার জন্য আমাদের নিজেদের রক্তকে , আমাদের মাল সম্পদকে বিপদে ফেলেছি। আর সে আমাদের উপর অন্যকে প্রাধান্য দিল। ফলে তারা তারা বিরোধিতা করবে। আর সিরিয়াবাসীরা কূফার দিকে চলে যাবে। আর সেদিন চামড়া মুছে দেয়ার ন্যায় প্রচন্ড যুদ্ধ করবে।যখন তার প্রেরিতরা ইরাকে পৌছবে। তখন সুফইয়ানী হতে বাগদাদ ও মদীনাতুয যাওরাতে (বাগদাদ) কি কি ঘটবে। আর তার ধংসযজ্ঞের ব্যাপারে যা আলোচনা হয়েছে ।

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৮৮৩ ]


⚫সর্বশেষ সিরিয়া যুদ্ধে মূলত দল/গ্রুপ থাকবে তিনটিঃ
___________________________________________________

**হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি এরশাদ করেন, শাম দেশে তিন ঝান্ডা বিশিষ্ট তিনজন লোক আত্নপ্রকাশ করবে, একজন আসহাব(Islamic state) , দ্বিতীয়জন আবকা(Tuareg) এবং তৃতীয়জন হবে, সুফিয়ানী (বানু কাল্ব গোত্রের ব্যাক্তি) । সুফিয়ানী বের হবে শাম (সিরিয়া) দেশ থেকে, আবকা(Tuareg) বের হবে মিশর থেকে। তবে সুফিয়ানী তাদের উপর জয়লাভ করবে।

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৮৪৫ ]

** হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, যখন কালো ঝান্ডা বাহীরা পরস্পর মতানৈক্যে লিপ্ত হবে তখন আরম জনপদের(সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের একটি ছোট এলাকা) একাংশ ধ্বসে পড়বে এবং তার পশ্চিম পার্শ্বের মসজিদের এক সাইড ধ্বংস হয়ে যাবে। অতঃপর শাম (সিরিয়া) দেশ থেকে তিন প্রকারের ঝান্ডা আত্নপ্রকাশ করবে। আসহাব(Islamic state) , আবকা (Tuareg) এবং সুফিয়ানীর ঝান্ডা(বানু কাল্ব গোত্রের ব্যাক্তি) । সুফিয়ানী বের হবে শাম(সিরিয়া) দেশ থেকে, এক পর্যায়ে সুফিয়ানী সব দলের উপর জয়লাভ করবে।

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৮৪১ ]

যদিও এখনও আবকা জাতি (আফ্রিকার বর্বর Tuareg Militant) এখনো সিরিয়াতে এসে হাজির হয়নি। তবে, তারা খুব শীঘ্রই মিশর দখল করে সিরিয়াতে এসে হাজির হবে। আর বাশার আল আসাদের পক্ষে যারা যুদ্ধ করছে তারাই হবে বানু কাল্ব গোত্রের সুফিয়ানীর অনুসারী। এবং কালো পতাকাবাহী আসবাব জাতি হল ইসলামিক ইস্টেট। অর্থাৎ তিনটি দল হলঃ

১,কালো পতাকাবাহী আসহাব জাতি (Islamic state)

২,আবকা জাতি (Tuareg) তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুনঃ https://islamicastrolgy.blogspot.com/2018/01/blog-post.html?m=1

৩, বানু কাল্ব গোত্রের সুফিয়ানী ।সুফিয়ানী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুনঃ https://islamicastrolgy.blogspot.com/2018/01/blog-post_75.html?m=1


⚫আসহাব জাতি(Islamic state) এবং হলুদ পতাকাবাহী বর্বর আবকা জাতি (Tuareg Militant) মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাঃ
____________________________________________________

**হযরত কা’ব (রহঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ (Islamic state এর নেতা) নামে এক লোক আব্বাসীয় বাদশাহ হবে। তিনি খুবই বিচক্ষন হবেন, তার মাধ্যমে তারা বিজয়ী হবে এবং তার হাতেই তাদের কল্যাণ নিহিত থাকবে। তিনিই হবেন, বালা-মুসিবতের চাবি এবং ধ্বংসের তলোয়ার। এক পর্যায়ে আমীরুল মুমিনীন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল্লাহর পক্ষ থেকে শাম দেশ থেকে আগত একটা চিঠি (মিশরে) পাঠ হবে। এরপর বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না বরং তোমাদের কাছে আমীরুল মুমিনীন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুর রহমানের(হলুদ পতাকাবাহী বর্বর Tuareg এর নেতা) চিঠি এসে পৌছাবে। সেটাও মিশরের মিম্বরে পাঠ করা হবে। উক্ত ঘটনা প্রকাশ পাওার কিছুদিনের মধ্যেই মাশরিক(আসহাব জাতি Islamic state) -মাগরিব বাসীরা (বর্বর আবকা জাতি Tuareg) শাম দেশের দিকে ধেয়ে আসবে। যেন সম পর্যায়ের দুটি বাজির ঘোড়া পরস্পরের দিকে ধেয়ে আসছে। তারা দেখতে পাবে নিঃসন্দেহে রাজত্ব ও ক্ষমতা যারা শাম বাসীদের আনুগত থাকবে তাদের হাতে বাকি থাকবে। প্রত্যেকে একথা বলবে, যারা বিজয়ী হবে একমাত্র তারাই রাষ্ট্র ক্ষমতার মসনদে আরোহন করবে।

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৭৪২ ]

অর্থাৎ যখন কালো পতাকাবাহী আসবাব জাতি (Islamic state) ইরাক ও সিরিয়াতে সবচেয়ে শক্তিশালী গ্রুপ হয়ে ফিরে আসার সাথে সাথে, মিশরেও সেখানকার এবং লিবিয়ার যোদ্ধারা মিশর দখল করবে। ঠিক কিছু দিনের মধ্যেই হলুদ পতাকাবাহী বর্বর আবকা জাতি (Tuareg Militant) তাদেরকে হটিয়ে মিশর দখল করবে। তখন তারা মিশরের লোকদেরকে নির্বিচারে হত্যা করবে এবং মহিলাদেরকে দাসী হিসেবে বিক্রি করবে। ঠিক ঐ সময়েই সিরিয়াতে কালো পতাকাবাহী আসবাব জাতি (Islamic state) দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যাবে। একটি গ্রুপ হবে সিরিয়ান দের এবং আরেকটি গ্রুপ হবে ইরাকীদের। ইরাকীরা খলিফার নির্দেশ অমান্য করে বিদ্রোহী হয়ে যাবে এবং তারাই হবে বড় অংশ। ঠিক ঐই সময়ে বর্বর আবকা জাতি (Tuareg Militant) সিরিয়ার হোমস শহরে আসহাব জাতি (Islamic state) কে ১৬/১৮ মাস অবরোধ করে রাখবে। তবে তারা যুদ্ধ করবে আসহাব জাতি (Islamic state) এর বিদ্রোহী ইরাকী গ্রুপটির সাথে। একপর্যায়ে তাদেরকে হত্যা করতে করতে ইরাকে পাঠিয়ে দেয়া হবে।

** হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসীর (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন মাহদীর অবির্ভাবের আলামত হল- যখন তুর্কি (তুরস্ক) জাতি তোমাদের উপর ঝাপিয়ে পড়বে। আর তোমাদের ঐ খলীফা মারা যাবে, যে মাল সম্পদ জমা করেছিল। আর তার পরে দূর্বল একজন শাসক তার স্থলাভিষিক্ত হবে। দুই বছর পর তার বাইয়াত নষ্ট হয়ে যাবে। দামেস্কের মসজিদের পূর্ব দিকের (হারাস্তা এলাকায়) দুটি দেয়াল ধসে যাবে এবং সিরিয়া হতে তিনটি দলের আত্নপ্রকাশ হবে। পূর্ব দিকের অধিবাসীদের মিসরের দিকে যাওয়া। আর সেটা সুফইয়ানীর উত্থানের নিদর্শন।

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৯৬৩ ]


⚫ইসলামিক ইস্টেট (ISIS) এর পুনরায় উত্থানের পরেই সুফিয়ানী এবং ইমাম মাহদীর আবির্ভাব হবে?
___________________________________________________

** হযরত জাবের আল জুফী (রহঃ) থেকে বর্নিত তিনি বলেন, "একবার আমি আবু জাফর আল বাকের (রহঃ) কে সুফিয়ানী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম? তিনি বলেন, সুফিয়ানীর উত্থান ততক্ষণ পর্যন্ত হবে না, যতক্ষণ না শায়শাবানীর (Islamic state) উত্থান না হয়? সুফিয়ানীর পূর্বে শায়শাবানীর (Islamic state) ভূমি ফেটে পানি বের হওয়ার মতো উত্থান হবে। শায়শাবানীর (Islamic state) এর উত্থান হবে কুফা (মসূল) থেকে। সে তোমাদের প্রতিনিধিদেরকে হত্যা (ধ্বংস) করবে। তারপরই তুমি সুফিয়ানীর উত্থানের অপেক্ষা করতে থাক, এবং তারপর মাহদীর আবির্ভাবের অপেক্ষা করতে থাক"।

(কিতাবুল গাইবাত, অধ্যায় নং - ১৭, হাদিস নং - ৮, পৃষ্ঠা - ৪৪০, মুজআম আল হাদীস ইমাম আল মাহদী, খন্ড নং -৩, পৃষ্ঠা -২৬৮)

** হযরত জয়নুল আবেদিন (রহঃ) থেকে হাজলাম ইবনে বশির (রহঃ) বর্ননা করেন, তিনি বলেন, আমি জয়নুল আবেদিন (রহঃ) কে অনুরোধ করলাম, তিনি যেন আমাকে ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের পূর্ব আলামত সম্পর্কে অবহিত করেন? উত্তরে তিনি বললেন, মাহদীর আবির্ভাবের পূর্বে জাজিরায় (ইরাক ও সিরিয়ার বর্ডার) থেকে আউফ সালামী নামে এক ব্যক্তি বের হবে। তার মাতৃভূমি হবে তিকরিত (ইরাকের একটি শহর) এবং তার নিহত হওয়ার স্থান হবে দামেস্কের মসজিদ। তারপর সমরখন্দ (উজবেকিস্তানের একটি শহর) থেকে শুয়াইব ইবনে সালেহ আবির্ভূত হবে এবং একই সময়ে ওয়াদিউল ইয়াবেস (দক্ষিণ সিরিয়ার দারা শহর) থেকে অভিশপ্ত সুফিয়ানীর উত্থান হবে। আর এই সুফিয়ানী হবে আবু সুফিয়ানের ছেলে উৎবার বংশধর। সুফিয়ানীর আবির্ভাবের সময়ে মাহদী লুকায়িত থাকবে এবং কিছুদিন পরেই তার আত্নপ্রকাশ হবে"।

(কিতাবুল গাইবাত, লেখকঃ শাইখ তুসী, বিহারুল আনোয়ার, খন্ড -৫২, পৃষ্ঠা - ২১৩,আসরে জুহুরী, পৃষ্ঠা - ১৬৯)

এই হাদিসটি যদি আমরা ইসলামিক ইস্টেট এর প্রধান আবু বকর আল বাগদাদীর সাথে মিলিয়ে দেখতে হবে, কারণ তিনি ইরাকের তিরকিত এর পার্শ্ববর্তী সামাররা শহরে জন্মগ্রহণ করেছেন, এবং তিনি যদি দামেস্কের মসজিদে নিহত হন, তাহলে বুঝতে হবে তার পরেই সুফিয়ানীর উত্থান হবে।


⚫ আসহাব জাতি (Islamic state) ইরাকের কুফা (মসূল) শহরে গনহত্যার শিকার হবেঃ
______________________________________________________

** হযরত ওয়ালিদ ইবনে হিশাম (রহঃ) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন তারা সেখানে প্রচন্ড যুদ্ধ করবে। অতপর আমরা তাদের এভাবে বর্ণনা করলাম। যখন সুফিয়ানী তাদের উপর বিদ্রোহ করবে, তখন উভয় দল (Islamic state & Tuareg) ছত্রভঙ্গ হয়ে যাবে। এমনকি আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে কূফায় (মসূল শহরে) প্রবেশ করাবেন। ফলে দিনের প্রথমাংশ হবে তাদের জন্য। আর শেষাংশ হবে তাদের বিরুদ্ধে।

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৮৭৩ ]

অর্থাৎ সিরিয়া যুদ্ধের প্রথম দিকে ইসলামিক ইস্টেট এবং হলুদ পতাকাবাহী বর্বর Tuareg Militant বিজয়ী হবে। কিন্তু যুদ্ধের শেষে সুফিয়ানী তাদের উপর বিজয়ী হবে এবং ইসলামিক ইস্টেট সুফিয়ানীর তান্ডবের কারনে ইরাকের কুফা (মসূল) শহরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হবে। তারপর সেখানেই সুফিয়ানী তাদেরকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করবে।

⚫মূলত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও সাহাবীদের যুগে ইরাক ও কুয়েত নামে কোন ভূখণ্ড ছিল না, ঐ সময়ে বর্তমান ইরাক ও কুয়েতকে বসরা ও কুফা নামে ডাকা হত। অর্থাৎ যদি কুফা ও বসরা উল্লেখ করে কোন হাদিস বর্ননা করা হত, তখন বুঝা যেত এটা বৃহত্তর ইরাক ও কুয়েত কেই বুঝানো হয়েছে? আর বাগদাদ শহরকে ডাকা হত 'জাওরা' নামে। চলুন হাদিস থেকেই জানি, ইরাকের কুফা নগরী বলতে বর্তমান কুফা নগরীকে বুঝানো হয়েছে? নাকি অন্য কোন শহরকে বুঝানো হয়েছে?

**হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্নিত, রাসূল (সাঃ)  বলেছেন, যখন সুফিয়ানী ফোরাত নদী পার হবে এবং এমন এক জায়গায় পৌছবে যার নাম হবে আকের কুফা (ইরাক ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকা)। আল্লাহ তা’আলা তার অন্তর থেকে ঈমানকে মুছে দিবেন। আর সেখানে একটি নদীর দিকে যে নদীর নাম হবে দাজীল (দাজলা নদী/Tigress River) । উক্ত নদীর নির্জন প্রান্তরে ৭০ হাজার তরবারীধারী(যোদ্ধা) লোককে সে হত্যা করবে। তখন তাদের ব্যতীত তাদের থেকে বেশী লোক থাকবে না। অতপর স্বর্ণের ঘরের (পাহাড়) প্রকাশ পাবে এবং তারা যুদ্ধ করবে ও ধ্বংসযজ্ঞ চালাবে। অতপর তারা (সুফিয়ানী বাহিনী) মহিলাদের পেট চিড়বে  বলবে হয়তো সে কোন গোলাম ( Islamic state) কর্তৃক গর্ভবতী হয়েছে। আর দাজলার পাড়ে র্মারা (Samarra/সামাররা শহর) এর দিকে মহিলাগণ কুরাইশদের (সুফিয়ানীকে সমর্থন কারী দের) নিকট সাহায্য কামনা করবে। সুফুনের (মসূল ও কিরকুক শহরের মধ্যবর্তী জায়গা) অধিবাসীদেরকে তারা ডাকবে যাতে তাদেরকে (ধ্বংসস্তুপ থেকে) উঠিয়ে নেয় এবং যাতে তারা তাদেরকে মানুষের সাথে সাক্ষাত করাতে পারে।তখন তারা (শিয়া সম্প্রদায়ের মহিলাগন) বনু হাশেমের (Islamic state) উপর শত্রুতার কারণে তাদেরকে উঠাবে না। আর তোমরা বনু হাশেমের সাথে শত্রুতা পোষণ করিও না, কেননা তাদের (বংশ) থেকেই রহমতের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এবং তাদের থেকে জান্নাতে পাখি হবে (হযরত জাফর ইবনে আবু তালেব রাঃ জন্মগ্রহণ করেছিলেন)
হে মহিলাগন! তখন কি অবস্থা হবে যখন জাহান্নামের অন্ধকার গর্তসমূহে (যখন) তোমাদেরকে নিক্ষেপ করবে যে গর্তগুলো থাকবে ফাসেকদের জন্য বরাদ্দ থাকবে। অতপর তাদের নিকট সাহায্য (খোরাসানের বাহিনী) আসবে। এমনকি তারা (খোরাসানের বাহিনী) সুফিয়ানীর সাথে যে সমস্ত মহিলা ও সন্তান সন্ততি (সুফিয়ানী বাহিনীর নিকট) আটক থাকবে তাদেরকে (খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দল) বাগদাদ ও কুফা (মসূল) থেকে উদ্ধার করবে।

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৮৮৫ ]

⚫এই হাদিসটিতে হাদীসে বর্নিত কুফা নগরীর ৫ টি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে সুফিয়ানী গনহত্যা চালাবে।

١) শহরটি হবে দাজলা বা, Tigress নদীর তীরে। মসূল শহর কিন্তু দাজলা নদীর তীরে অবস্থিত সবচেয়ে বড় শহর। অথচ, ইরাকের বর্তমান কুফা নগরী হল ফোরাত নদীর তীরে।

٢) বর্তমানে সিরিয়াতে শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন যেভাবে বাশার আল আসাদ বাহিনীকে সমর্থন করছে, ঠিক সুফিয়ানীর উত্থানের পরেও শিয়ারা বানু কাল্ব গোত্রের কুরাইশী শাসক সুফিয়ানীকে সমর্থন করবে। আর ইসলামিক ইস্টেট এর সাথে শিয়াদের জন্ম থেকেই একটা শত্রুতা রয়েছে। যার কারণে একে অপরকে হত্যা করেই চলছে। এটা পরবর্তীতে ও অব্যাহত থাকবে।

٣) সুফিয়ানী গনহত্যা সংগঠিত করার পর, সেখানে ধ্বংসস্তুপে আটকা পরা মহিলারা পার্শ্ববর্তী সুফূনের (মসূল ও কিরকুক শহরের মধ্যবর্তী জায়গা) লোকদেরকে উদ্ধার করার জন্য ডাকবে। সুফূন থেকে বর্তমান কুফা নগরীর প্রায় ৪০০ কিঃমিঃ। আর সুফূন থেকে মসূল শহরের দূরত্ব ১০০ কিঃমিঃ এর মত। তাই ৪০০ কিঃমিঃ দূরের লোকদেরকে উদ্ধারের জন্য ডাকবে এটা যৌক্তিক নয়।

٤) দাজলা নদীর প্রান্তে ধ্বংসস্তুপে আটকা পড়ে থাকা মহিলাগন মার্রা (সামররা শহরের) কুরাইশদের নিকট সাহায্য চাইবে। কিন্তু তারা শত্রুতা বশতঃ উদ্ধার করবে না। অর্থাৎ সুফিয়ানী কিন্তু কুরাইশ বংশের উমাইয়া গোত্রের লোক হবেন, যারা তাকে সমর্থন করবে তারা (শিয়ারা) তাদেরকে শত্রুতা বশতঃ উদ্ধার করবে না। কারন বনু হাশেম (Islamic state) এর প্রধান আবু বকর আল বাগদাদী বনু হাশেম গোত্রের লোক, তাই বনু হাশেম বলতে ইসলামিক ইস্টেট কে বুঝানো হয়েছে। বর্তমানে সামাররা শহরে ৬০% - ৬৫% হচ্ছে শিয়া, আর সুন্নি মুসলিম হচ্ছে ৩২% - ৩৫% এর মত।  তবে সামররা শহরটি মসূল ও কুফা নগরীর মধ্যখানে অবস্থিত।

٥) সুফূনের অধিবাসীরা কালো পতাকাবাহী (Islamic state) এর ধ্বংসস্তুপে আটকা পরা মহিলাদের শত্রুতা বশতঃ উদ্ধার করবে না। সুফূন একটি গ্রামের নাম এর নিকটবর্তী বড় শহর হল কিরকুক। যার ৬০% মানুষ হল শিয়া মুসলিম। আর শিয়াদের সাথে Islamic state এর সাথে জন্ম থেকেই দা-কুমড়া সম্পর্ক।


⚫সংক্ষেপে আসহাব জাতি (Islamic state) ভবিষ্যতে যেসব বিপদের মুখোমুখি হবে, তা হলঃ
___________________________________________________

১, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের মৃত্যুর পর আসহাব জাতি (Islamic state) পুনরায় ইরাক ও সিরিয়াতে সবচেয়ে শক্তিশালী গ্রুপ হয়ে ফিরে আসা।

২,  ইসলামিক ইস্টেট খুব শীঘ্রই সিরিয়ার হোমস শহর, ইরাকের রাজধানী বাগদাদ ও মসূল শহর বিজয় করবে।

৩, আসহাব জাতি (Islamic state) দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে। এবং ইরাকের যোদ্ধারা খলিফার নির্দেশ অমান্য করে বিদ্রোহী হয়ে খলিফার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।

৪,আসহাব জাতি (Islamic state) এর মিশর ও লিবিয়ার যোদ্ধারা মিশর দখল করবে। কিন্তু কিছু দিন পর হলুদ পতাকাবাহী আবকা জাতি (Tuareg) সম্প্রদায় তাদেরকে হটিয়ে মিশর দখল এবং সিরিয়ার হোমস শহর অবরোধ করবে।

৫, হলুদ পতাকাবাহী আবকা জাতি (Tuareg) কালো পতাকাবাহী আসবাব জাতির (Islamic state) এর ইরাকী যোদ্ধাদের হত্যা করতে করতে সিরিয়া থেকে ইরাকে পাঠিয়ে দিবে।

৬, সুফিয়ানীর উত্থান হবে এবং সে আসহাব জাতিকে (Islamic state) পর পর ৭টি বড় বড় যুদ্ধে পরাজিত করে সিরিয়া থেকে ইরাকে পাঠিয়ে দিবে।

৭, সুফিয়ানী ইরাকের মসুল শহরে আসহাব জাতির (Islamic state) ৭০ হাজার সৈন্য বাহিনীকে হত্যা করে পুরো শহর ধ্বংস করে দিবে।

৮,ধ্বংসস্তুপে আটকা পরা আসহাব জাতি (Islamic state) এর মহিলা ও শিশুদের কালো পতাকাবাহী খোরাসানের বাহিনী উদ্ধার করবে। এবং সুফিয়ানী হাতে থাকা বন্দিদের কেও উদ্ধার করবে। এবং এর ৬ বছর পর ইমাম মাহদীর আবির্ভাব হবে।

(ইনশাআল্লাহ)........

Popular posts from this blog

ইমাম মাহদী কোথায় জন্মগ্রহণ করবেন? আমরা তাকে কোন দলে খুঁজে বের করব?

ইমাম মাহদীর আবির্ভাব হবে ২০২৮ সালে (ইনশাল্লাহ)

ফোরাত নদীর তীরে সোনার পাহাড় কোথায় এবং কবে ভেসে উঠবে? (২০২৩ সালে ইনশাল্লাহ)