মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক সম্পর্কে হাদিসের আশ্চর্য ভবিষ্যৎবাণী

২০১১ সালে আরব বসন্তে ক্ষমতা হারানোর পূর্বে হোসনি মোবারক ১৪ই অক্টোবর ১৯৮১ থেকে ১১ই ফেব্রুয়ারি ২০১১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৩০ বছর মিশরের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। দীর্ঘ ৩০ বছর যাবৎ মুসলমানদের চির শত্রু ইসরাইলের স্বার্থ রক্ষা ও ইখওয়ানুল মুসলিমীন( Muslim Brotherhood) উপর নির্যাতনের জন্য মিশরের মানুষ তাকে ফেরাউনের উত্তরসূরি মনে করত।
১৪০০ বছর পূর্বে রাসূল (সাঃ) প্রত্যেকটি যুগের ভালো এবং অত্যাচারী শাসকের ব্যপারে তিনি আমাদের সতর্ক করে গেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, আমরা রাসূল (সাঃ) এর হাদীস গুলো একবার পড়েও দেখিনা আর চিন্তাও করি না রাসূল (সাঃ) আমাদের জন্য কি বলে গেছেন?

* হযরত নুয়াইম বিন হাম্মাদের আল ফিতান গ্রন্থে মুহাম্মদ ইবনে আলি থেকে হযরত জাফর (রাঃ) বর্ননা করেন, যখন আব্বাসীয় বংশের লোকেরা খোরাসানে আসবে, তখন পূর্ব দিকে শিংঙ্গার আকৃতির ন্যায় একটি তারকার জন্ম হবে, তারপর চন্দ্রগ্রহন এবং সূর্যগ্রহণ হবে। তখন অত্যাচারী জেদ করে বসে থাকবে, যতক্ষণ না মিশরে দাড়-কাক (অর্থাৎ বড় কাক) না আসে।

[ আল মুত্তাকি আল হিন্দিঃ আল বুরহান ফি আলামাতিল মাহদী ফি আখিরুজ্জামান, পৃষ্ঠা - ৩২]

আমরা সবাই জানি যে, ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন আফগানিস্তান আক্রমণ করেছিল তখন তাদের বিপক্ষে যুদ্ধ করার জন্য সৌদি আরব, মিশর ফিলিস্তিন ও ইরাক থেকে অনেক আরব যোদ্ধারা আফগানিস্তান গিয়েছিল, যারা হয়তো অনেকেই কুরাইশ বংশের আব্বাসীয় গোত্রের লোক ছিলেন। যেমন আবু মাসআব আল জারকাবি ছিলেন বনি হাসান বংশের একজন লোক। তারপর ২০০৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি আকাশে হেলির ধূমকেতু দেখা যায়, যার আকৃতি অনেকটাই শিংঙ্গার মত দেখতে। তার ঠিক দুই বছরের মধ্যেই ২০১১ সালে আরব বসন্তের বিপ্লবে হোসনি মোবারক ক্ষমতাচ্যুত হন।

"ইমাম মাহদী (আঃ) আগমনের পূর্বে মিশরে একজন দাড় কাক(অর্থাৎ বড় কাক) আত্মপ্রকাশ করবে। "
 আর মজার ব্যাপার হচ্ছে, হাদিসের ভাষায় তাকে কাকের সাথে তুলনা করা হয়েছে, যেটা সত্যিই আশ্চর্য জনক। ছবিতে দেখুন....

*** "হযরত দাইলামী তিনি, আবু আলি আল মারদানী থেকে, তিনি আবু জর (রাঃ) থেকে, তিনি বলেন রাসূল (সাঃ) বলেছেন, কুরাইশ বংশের নাক ছিদ্র ওয়ালা এক লোক মিশরে আত্মপ্রকাশ করবে, সে আক্রান্ত হবে তার ক্ষমতাও ধ্বংস হবে। "

[ আল মুত্তাকি আল হিন্দিঃ আল বুরহান ফি আলামাতিল মাহদী ফি আখিরুজ্জামান, পৃষ্ঠা - ৩০]

আশ্চর্যের ব্যাপার হল হোসনি মোবারকের নাকের উপরের দিকেই কিন্তু ছোট্ট একটা গর্ত ছিল, ছবিতে দেখুন। ২০১১ সালে আরব বসন্তের জোয়ারে ঠিকই তার ৩০ বছরের ক্ষমতার মসনদ উরে গিয়েছিল।

***" হযরত কাব (রাঃ)  থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন মিশরে মাখজুমী গোত্রের একজন ক্ষমতা গ্রহণ করবে, তার পর মাওয়ালী দের একজন, তার পর একজন লম্বা, শক্তিশালী, ও রক্তপিপাশু একজন আসবে, যে লোক তার বিরোধিতা করবে তাকেই সে ধ্বংস করবে। "

[আল মুত্তাকি আল হিন্দিঃ আল বুরহান ফি আলামাতিল মাহদী ফি আখিরুজ্জামান, পৃষ্ঠা - ৩০]

ইসলামের প্রাথমিক যুগে উত্তর আরব, বর্তমান জর্ডান ও মিশরের সানাই উপত্যকা এলাকার বাসিন্দাদের মাখজুমী বলে সম্বোধন করত, আর মিশরের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট গামাল আবদেন নাসের হয়তো এই অঞ্চলের পূর্বপুরুষদের সন্তান, সে ১৯৫৪ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত মিশরের প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তার সময়ে ইখওয়ানুল মুসলিমীন(Muslim Brotherhood)  দ্বিতীয় বারের মত নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এবং এই জালেম সাইয়্যেদ কুতুব শহিদ (রাঃ) কে ফাসি দিয়েছিল। আর মিশরের তৃতীয় প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত কেই হয়ত মাওয়ালী (অর্থাৎ ধর্মান্তরীত নতুন মুসলিমদের বংশধর) বলা হয়েছে। তারপর বলা হয়েছে একজন লম্বা, শক্তিশালী ও রক্তপিপাশু আসবে, আর হোসনি মোবারক ছিলেন লম্বা, শারীরিক ভাবে শক্তিশালী এবং তার নিজস্ব নিরাপত্তার জন্য ছিল ২৫ হাজার সেনাবাহিনী। দীর্ঘ ৩০ বছরে সে ইখওয়ানুল মুসলিমীন এর উপর জুলুম চালিয়ে হাজার হাজার কর্মীদেরকে হত্যা করেছে, শাইখ আব্দুল্লাহ আজ্জাম (রাহিঃ) তখন ইখওয়ানুল মুসলিমীন সাথে জড়িত ছিলেন এবং মিশর ছেড়েছেন, আর শাইখ আইমান আল জাওয়াহিরী (হাফিঃ) তো কারাগারেই ছিলেন । এমনকি সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী কমিউনিস্ট পার্টিকেও সে রেহাই দেয়নি, অর্থাৎ যারাই তার বিরোধিতা করেছে তাদের সকলকে সে নির্যাতন করেছে।

*** " দূর্নীতি (অর্থাৎ গামাল আবেদন নাসের ও আনোয়ার সাদাতের জুলুম, অত্যাচার) দেখা দিবে, তারপর আবার দূর্নীতি (অর্থাৎ হোসনি মোবারকের জুলুম, অত্যাচার) দেখা দিবে, একপর্যায়ে সে মানুষের উপর তরবারি দিয়ে হামলা করতে উৎসাহিত করবে। তারপর আবারো দূর্নীতি (অর্থাৎ আব্দুল ফাত্তাহ আল সিসি এর জুলুম, অত্যাচার) দেখা দিবে। তার সময়ে সকল অবৈধ, অন্যায় কাজকে ন্যায় ও বৈধ মনে করা হবে। তার পর সবচেয়ে কাঙ্খিত ব্যাক্তি মুসলমানদের খলিফা ইমাম মাহদী (আঃ) এর আগমন ঘটবে। "

[আল মুত্তাকি আল হিন্দিঃ আল বুরহান ফি আলামাতিল মাহদী ফি আখিরুজ্জামান, পৃষ্ঠা - ২৬]

হোসনি মোবারকে ৩০ বছর ধরে মিশরের মানুষের উপর তো জুলুম, অত্যাচার ও নির্যাতন করেছে, তার উপর ২০১১ সালে মোবারক বিরোধী আন্দোলনের সময় তার সমর্থকেরা খোলা তরবারি নিয়ে হামলা করেছিল। তারপর ২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট মুরসির ক্ষমতা থেকে অপসারণের পর মিশরের তাহরির স্কোয়ারে এক রাতে ২৬০০ ইখওয়ানুল মুসলিমীন (Muslim Brotherhood) এর সমর্থকদের হত্যা করা হয়েছিল। তারপর কয়েক মাসেই প্রায় ৪০ হাজার ইখওয়ানুল মুসলিমীন সমর্থক কে কারাগারে নিক্ষেপ করেছে আব্দুল ফাত্তাহ আল সিসি। অর্থাৎ আগের সকল জুলুম অত্যাচারকে সে হার মানিয়েছে।

আর হাদীসের শেষ অংশে বলা হয়েছে, তার পরেই পৃথিবীর সবচেয়ে কাঙ্খিত ব্যাক্তি মুসলমানদের খলিফা ইমাম মাহদী (আঃ) এর আগমন হবে। তাই মিশরবাসী সত জুলুমের পরে আশায় বুক বাধতেই পারে।

Popular posts from this blog

ইমাম মাহদী কোথায় জন্মগ্রহণ করবেন? আমরা তাকে কোন দলে খুঁজে বের করব?

ইমাম মাহদীর আবির্ভাব হবে ২০২৮ সালে (ইনশাল্লাহ)

ফোরাত নদীর তীরে সোনার পাহাড় কোথায় এবং কবে ভেসে উঠবে? (২০২৩ সালে ইনশাল্লাহ)