সিরিয়া যুদ্ধে আমরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, ও তুরস্কের জড়িয়ে পরা সম্পর্কিত হাদিসঃ

সিরিয়া যুদ্ধে হঠাৎ করে একটি নতুন মোড় নিয়েছে। সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের নিকটবর্তী দৌমা শহরে গ্যাস হামলার পরিপ্রেক্ষিতে আমরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি সিরিয়ায় হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছে। সেই লক্ষ্যে তারা ইতোমধ্যেই তাদের যুদ্ধ জাহাজ গুলো সিরিয়ার উপকূলে নিয়ে আসছে। আমরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির সব রকম প্রস্তুতি শেষ। এছাড়াও সিরিতে হামলা চালানোর জন্য আমরিকার সহযোগী ঈসরাইল, সৌদি আরব, অস্ট্রেলিয়া, জর্ডান সহ আরো অনেক দেশ তাদেরকে সমর্থন দিয়েছে। শুধুমাত্র এখন যুদ্ধের ঘোষণা দেয়া বাকি আছে। আর এই অবস্থায় অনেকেই আতংকিত হয়ে পরেছে। কি হবে ভবিষ্যতে? কেউ কেউ মনে করছেন, নাকি এখান থেকেই বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়, তাই সচেতনতার জন্য আমাদের হাদীসের আলোকে জানতে হবে, সিরিয়া যুদ্ধ ভবিষ্যতে কোন দিকে মোড় নিবে?

** হযরত আরতাত (রহঃ) থেকে বর্নিত, তিনি এরশাদ করেন, যখন তুর্কী (তুরস্ক), রোম (আমরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি) এবং খাসাফ জাতি (রাশিয়া) দিমাশকের (দামেস্ক) এক প্রান্তরে জমায়েত হবে এবং দিমাশকের মসজিদের পশ্চিম প্রান্তে আরেকদল ভুপাতিত হবে তখনই শাম দেশে আবকা, আসহাফ এবং সুফিয়ানীদের তিনটি ঝান্ডা প্রকাশ পাবে। দিমাশক এলাকাকে জনৈক লোক (বাশার আল আসাদ) অবরুদ্ধ করে রাখবে। এক পর্যায়ে সেই লোক (বাশার আল আসাদ) এবং তার সাথীদেরকে হত্যা করা হলে, বনু সুফিয়ান থেকে আরো দুইজন লোকের আত্ন প্রকাশ হবে। তখন যেন দ্বিতীয় বিজয় পাওয়া গেল।অতঃপর যখন আবকা গোত্রের লোকজন মিশর থেকে এগিয়ে আসবে তখনই সুফিয়ানী তার সৈন্যদের সাহায্যে তাদের সামনে আত্নপ্রকাশ করবে। রোম (আমরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি) এবং তুর্কীরা (তুরস্ক) মিলে কারকায়সিয়া (দেইর আজ জুর) নামক স্থানে তাদেরকে হত্যা করবে এবং তাদের গোশত দ্বারা জঙ্গলে বাঘ-ভল্লুকরা তৃপ্ত হবে।

[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৮৩৩ ]

এই হাদিসটিতে আনেক গুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে, এগুলো একটু বিস্তারিত আলোচনা করতে চাই।

১, রোমান বাহিনী (আমরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি), তুর্কি বাহিনী(তুরস্ক) ও খাসাফ জাতি (প্রাচীন খাজার জাতি ছিল তুর্কিদের একটি বিখ্যাত গোত্রের নাম, যাদের অবস্থান ছিল রাশিয়া, জর্জিয়া, কাজাকিস্তান ও ইউক্রেন এলাকায়। তাই খাজার বা, খাসাফ জাতি বলতে আমাদের রাশিয়াকে বুঝতে হবে)  তারা সবাই দামেস্কের এক প্রান্তে জড়ো হবে।

২, দামেস্কের পশ্চিম প্রান্তে আরেকদল ভুপাতিত হবে। এখানে আরেক দল ভূপাতিত হবে বলতে, খাসাফ বা, খাজার জাতি ও তাদের সহযোগীরা (রাশিয়া, ইরান, সিরিয়া, হিজবুল্লাহর সৈন্য বাহিনী) ভুপাতিত হবে। তারা ভূপাতিত হবে দামেস্কের পূর্ব গৌতার হারাস্তা নামক এলাকায়। এখানে প্রায় ১ লক্ষ লোক নিহত হবে।

৩, দামেস্ক শহরকে একজন লোক (বাশার আল আসাদ) অবরুদ্ধ করে রাখবে। এক পর্যায়ে সেই লোক (বাশার আল আসাদ) ও তার সহযোগীদের হত্যা করা হবে। তারপর বানু সুফিয়ান থেকে আরো দুইজন লোকের (প্রথম সুফিয়ানী ও দ্বিতীয় সুফিয়ানী) আত্ন প্রকাশ করবে। আর প্রথম সুফিয়ানীর উত্থানের পর, শিয়াদের জন্য মনে হবে তারা দ্বিতীয় বিজয় পেয়েছে। কারন ইতোমধ্যেই প্রথম বার বাশার আল আসাদ ও শিয়া সম্প্রদায় প্রায় পুরো সিরিয়াকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসছিল।

৪, তারপর তিনটি বাহিনীর আসহাব জাতি, আবকা জাতি ও সুফিয়ানীর আত্নপ্রকাশ হবে। এবং প্রথম সুফিয়ানী আবকা জাতির কিছু লোকদের সাহায্যে আসহাব জাতি আবকা জাতির উপর বিজয়ী হবে।
এছাড়াও আসহাব জাতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুনঃhttps://islamicastrolgy.blogspot.com/2018/03/blog-post.html?m=1
আবকা জাতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুনঃ https://islamicastrolgy.blogspot.com/2018/01/blog-post.html?m=1
সুফিয়ানী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুনঃ https://islamicastrolgy.blogspot.com/2018/01/blog-post_75.html?m=1


৫, আবকা জাতি মিশরের দিক থেকে এগিয়ে আসবে। প্রথমে লিবিয়া ও মিশরে কালো পতাকাবাহী দলের সেখানে ব্যপক উত্থান হবে। তার পর তাদেরকে পরাজিত করে হলুদ পতাকাবাহী বর্বর আবকা জাতি মিশর দখল করবে। তারপর তারা সিরিয়াতে এসে উপস্থিত হবে। কিন্তু জর্ডানে এসে তাদের নেতার মৃত্যুর পর আবকা জাতি তিন ভাগ হয়ে যাবে। এক ভাগ নিজেদের দেশে ফিরে যাবে। দ্বিতীয় ভাগ হজ্জ্ব করার জন্য চলে যাবে। তৃতীয় ভাগ সুফিয়ানীর সাথে যোগ দিবে।

৬, সর্বশেষ (২০২৩ সালে ইনশাল্লাহ) ফোরাত নদীর তীরে দেইর আজ জুরের নিকটবর্তী ঐতিহাসিক কিরকিসিয়ার প্রান্তে সোনার পাহাড় ভেসে উঠবে।এটি দখল করার জন্য সেখানে বাশার আল আসাদের উত্তরসূরী প্রথম সুফিয়ানীর বিরুদ্ধে তুর্কি (তুরস্ক) রোমান বাহিনী (আমরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি) একটি ভয়ংকর যুদ্ধ হবে। এই যুদ্ধেই প্রতি ১০০ জনের ৯৯ জন মারা যাবে। সর্বমোট ১ লক্ষ বা, ১ লক্ষ ৬০ হাজার লোক নিহত হবে।

৭, বাশার আল আসাদের উত্তরসূরী প্রথম সুফিয়ানী সাড়ে তিন বছর রাজত্ব করে মারা যাবে। এই সময়ে সে সিরিয়াতে জেগে উঠা সকল বিদ্রোহী গ্রুপ, জিহাদী গ্রুপ কে পরাজিত করবে। তারপর কিরকিসিয়ার যুদ্ধে আমরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও তুরস্কের বিরুদ্ধে মারাত্মক যুদ্ধে লিপ্ত হবে। কিরকিসিয়ার যুদ্ধের পর প্রথম সুফিয়ানী ইরাক ও সিরিয়ার বর্ডারে ফোড়া আক্রান্ত হয়ে মারা যাবে। তার মৃত্যুর পর দ্বিতীয় সুফিয়ানীর উত্থান হবে, সে ইরাকের কুফা (মসূল) শহরে হামলা করে ৭০ হাজার লোক মেরে ফেলবে। তারপর কালো পতাকাবাহী খোরাসানের বাহিনী আত্নপ্রকাশ করবে। এছাড়াও দ্বিতীয় সুফিয়ানী মিশর ও সৌদি আরব আক্রমণ করবে। তার সময়েই হজ্জের মৌসুমে ইমাম মাহদীর আবির্ভাব হবে।


তাই আখিরুজ্জামান নিয়ে যারা পড়াশোনা করেন, তাদেরকে মনগড়া ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ বাদ দিয়ে উচিত হবে, হাদিসের আলোকে পরিস্থিতি বিশ্লেষন করা।

Popular posts from this blog

ইমাম মাহদী কোথায় জন্মগ্রহণ করবেন? আমরা তাকে কোন দলে খুঁজে বের করব?

ইমাম মাহদীর আবির্ভাব হবে ২০২৮ সালে (ইনশাল্লাহ)

ফোরাত নদীর তীরে সোনার পাহাড় কোথায় এবং কবে ভেসে উঠবে? (২০২৩ সালে ইনশাল্লাহ)